আজ বছরের প্রথম দিন। দিনটি কল্পতরু উৎসব হিসেবে পালিত হয় বাংলার নানা প্রান্তে। ১৮৮৬ সালে আজকের দিনেই কল্পতরু হয়েছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। গলার রোগে তখন ঠাকুরের শরীর ভগ্ন। পাশ ফেরার শক্তি অবধি নেই। কিন্তু ইংরেজি নববর্ষের প্রথমদিন ঠাকুর নেমে এসেছিলেন ভক্তদের মধ্যে। হয়েছিলেন মনোবাঞ্ছার কৃপা কল্পতরু। আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, 'তোমাদের চৈতন্য হউক।' এ ঘটনা ঘটেছিল কাশীপুর উদ্যানবাটিতে। আজও প্রতি বছর ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনে কাশীপুরে ঢল নামে ভক্তদের। পাশাপাশি, দক্ষিণেশ্বর, বেলুড় মঠ এবং রামকৃষ্ণের জন্মস্থান কামারপুকুরেও ভিড় করেন মানুষজন।
কল্পতরু উৎসব উপলক্ষ্যে বিশেষ মঙ্গলারতি হয় কাশীপুর উদ্যানবাটিতে। দিনভর চলে পুজোপাঠ, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবন ও বাণী নিয়ে আলোচনা হয়। দক্ষিণেশ্বরেও ভক্তদের সমাগম হয়। সকাল থেকেই মন্দিরের বাইরে ফুলের ডালা হাতে ভক্তদের লম্বা লাইন চোখে পড়ে। কল্পতরু উৎসবের দিন পরমহংসদেবের কাছে কিছু থেকে চাইলে, সে ইচ্ছাপূরণ হয়, এই বিশ্বাস থেকেই মন্দিরের বাইরে ভক্তের ঢল নামে। দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের ঘরে যান ভক্তরা। দিনটি মহাসমারোহে পালিত হয় শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান কামারপুকুরে। অগণিত ভক্তের ভিড় জমে বেলুড় মঠেও।
একেবারে ভোরে কামারপুকুরে মঙ্গল আরতি দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। দিনভর ধরে চলে, বৈদিক মন্ত্র, স্তোত্রপাঠ, বিশেষ পুজো এবং ভজন। দুপুরে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণের আয়োজন করা হয়। জন্মস্থান হুগলির কামারপুকুর উৎসবের চেহারা নেয়। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য ভক্ত কামারপুকুরে ভিড় জমান। কল্পতরু দিবস উপলক্ষ্যে কামারপুকুর মঠ চত্বরকে সুন্দরভাবে সাজানো হয়। ঠাকুরের বাড়ি, মন্দির সব জায়গা ফুল দিয়ে সাজানো হয়। কল্পতরু দিবস উপলক্ষ্যে ঠাকুরের মূর্তি সাজানো হয়। এদিন বিশেষ ভোগের ব্যবস্থা করা হয়। বিশেষ পুজো, হোম হয়। বিকেলে থাকে ধর্মসভা, ভজন অনুষ্ঠান। সকালে কামারপুকুরে বর্ণাঢ্য প্রভাতফেরি বের হয়, সারা গ্রাম ও মঠ চত্বর প্রদক্ষিণ করে। সব মিলিয়ে মঙ্গলারতি এবং বিশেষ পুজোপাঠের মধ্যে দিয়ে মঠের পরিবেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। মন্ত্রোচ্চারণ ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে উৎসব অনন্য মাত্রা পায়।
বছরের প্রথম দিনে ভক্তের ঢল নামে বেলুর মঠেও। দক্ষিণেশ্বর বা কাশীপুর উদ্যানবাটিতে কল্পতরু উৎসব পালিত হলেও বেলুড় মঠে তেমন কোনও অনুষ্ঠান হয় না। তবে বিশেষ দিনটিতে অগণিত ভক্ত সমবেত বেলুর মঠে। প্রথা মেনে ভোরবেলায় মঙ্গল আরতির মাধ্যমে বেলুড় মঠের নিত্যদিনের পুজো শুরু হয়। সারা দিন খোলা থাকে মঠ প্রাঙ্গণ।