বেশির ভাগ মিউজিয়ামেই দর্শনার্থীদের উদ্দ্যেশ্যে লেখা থাকে ‘প্লিজ ডু নট টাচ দ্য আর্ট’। কিন্তু স্পেনের মাদ্রিদের বিখ্যাত মেসিও দেল পার্দো মিউজিয়াম সম্প্রতি উল্টো কান্ড ঘটেছে। বিখ্যাত শিল্পীদের ছবি স্পর্শের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে তা দৃষ্টিহীন মানুষদের জন্য।
এতদিন পর্যন্ত আর্ট গ্যালারি বা মিউজিয়ামের দরজা প্রায় বন্ধই ছিল দৃষ্টিহীন মানুষদের জন্য। কারণ অডিয়ো বা ব্রেইল ব্যবস্থার সুযোগ না থাকায় মিউজিয়ামের কোন অভিজ্ঞতাই নিতে পারতেন না তাঁরা। প্রতিবছর ষাট লাখ মানুষ বিখ্যাত পেইন্টিংগুলো দেখতে আসেন। কিন্তু দৃষ্টিহীন মানুষরা সেই অভিজ্ঞতার বাইরেই থেকে যান।
তাঁদের জন্য কোনও ব্যবস্থা রাখা হয় না। গাইড থাকলে তিনি যতটুকু বলেন সেই তথ্য এবং বর্ণনা শুনেই ফিরে আসতে হয় তাঁদের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিল্পকর্মের বর্ণনা দেওয়ার মতো গাইড থাকে না।ব্রেইল বা অডিও উপস্থাপনা তো অনেক দূরের ব্যাপার।
এই সমস্যার সমাধান করা গিয়েছে সম্প্রতি। সারা বিশ্বে বেশ কয়েকটি সংস্থা বিখ্যাত শিল্প চিত্রের ব্রেইল ভার্সান তৈরি করেছে। ছবিগুলিকে রিলিফ আর্ট-এর আকার দেওয়া হয়েছে।
ড. গ্যাচেট, জর্জ ওয়ালিংটনের ডেলাওয়ার নদী পার হওয়ার দৃশ্য, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসার মত শিল্পকর্মগুলিকে দৃষ্টিহীনদের সুবিধার জন্য থ্রি-ডি রূপ দেওয়া হচ্ছে।
ছবি দেখার স্পর্শের মাধ্যমে সুযোগ। দৃষ্টিহীন নাগরিকদের অনুভবের জন্য স্পর্শ করতে পারার সুযোগ খুবই জরুরী।
দৃষ্টিহীন শিল্প অনুরাগী জানিয়েছেন, চোখে দেখতে না পেলেও আমি শিল্প ভালোবাসি। দৃষ্টিহীনতার কারনে ভালোবাসাটা মরে যায়নি। হাতের আঙ্গুল চোখের কাজ করে।
শুধু স্পেন নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শিল্প সংগ্রহশালাগুলিতে দৃষ্টিহীনদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার ভাবনা চলছে। ব্রিটেনের রয়্যাল ইন্সটিটিউট অফ ব্লাইন্ড পিপল জানিয়েছে, ব্রিটেনে প্রায় ২ লক্ষ মানুশ আছে যারা দৃষ্টিহীন। তারা ভাবতেই পারেন না পৃথিবীর আশ্চর্য শিল্পকর্মগুলো কোনদিনও চাক্ষুস করতে পারবে। সেই জন্য এই সমস্ত শিল্পকর্মগুলির থ্রি-ডি রেপ্লিকা তৈরি হচ্ছে। যা স্পর্শ করতে পারবেন দৃষ্টিহীন মানুষরা। সংস্থার প্রধান এলিজা লিজা জানিয়েছেন, এই উদ্যোগ সাফল্য পেলে শিল্পের দুনিয়ায় একটি বিপ্লব আসবে। দৃষ্টিহীন মানুষরা আর্ট গ্যালারিতে নিয়মিত আসতে পারবেন তাঁদের মধ্যে আর বিচ্ছিন্ন থাকার বিপন্নতা কাজ করবে না। ওই সমস্ত মানুশের মুখে আমরা হাসি আনতে চাই।
থ্রি-ডি ভার্সানগুলোর একটি অনলাইন লাইব্রেরিও করা হবে।