কীভাবে মা সারদা হয়ে উঠলেন সংঘজননী ?

আজ ২০ জুলাই। ১৯২০ সালে আজকের দিনেই পরলোক গমন করেছিলেন তিনি। তিনি হলেন জগৎজননী মা সারদা। শুধুমাত্র তাঁর ভক্তদের কাছে নয়। তিনি ছিলেন গোটা জগতের ‘মা’। অন্যের কষ্ট দেখলে বরাবরই তার মন ব্যাকুল হয়ে উঠত। একসময় সকলকে প্রসাদ দেওয়ার সময়, তিনি নিজে হাতে পাতা ধুয়ে, কাপড় দিয়ে মুছে তারপর প্রসাদ দিতেন। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের স্মরণে গৃহত্যাগী সন্ন্যাসীদের কাছে তিনিই ছিলেন পরমারাধ্যা। তিনি যদি উদ্যোগ না নিতেন তাহলে হয়তো প্রতিষ্ঠা হত না রামকৃষ্ণ সংঘ। তাই তিনিই হচ্ছেন সংঘজননী।

processed-57856a54-7fea-4fbe-a101-9c2fe80e44ce_U2i3tVg6

শ্রীরামকৃষ্ণদেব মা সারদাকে দেবীজ্ঞানে পুজো করেছিলেন। ১৮৮৬ সালে শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ সহ অনেকেই যারা গৃহত্যাগী হয়েছিলেন, তাঁরা সেই সময় সারদা মায়ের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁদের তখন নির্দিষ্ট কথাও যাওয়ার ছিল না।

১৮৯০ সালে মা যখন বুদ্ধগয়া ভ্রমণে গেলেন দেখলেন সেখানকার মঠ এবং সেই মঠের সাধুদের সংঘবদ্ধ জীবনযাপন। মনে পড়ল তাঁর ছেলেদের কথা। গৃহত্যাগী সন্ন্যাসীদের কথা। তাঁরা তো এমনভাবে নেই। তাঁদের কষ্টের কথা মনে পড়ে ব্যথিত হলেন শ্রীমা। তাঁদের নির্দিষ্ট কোনও আশ্রয় নেই। দুটি অন্নের স্থায়ী সংস্থান নেই। মনে মনে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করলেন, ছেলেদের জন্যেও যেন অনুরূপ ব্যবস্থা হয়। সেই শুরু।

মায়ের কথায়, এর জন্য ঠাকুরের কাছে কতই না কেঁদেছেন তিনি। সেই প্রার্থনায় বারবার ফুটে উঠত খানিকটা এই ধরনের কথা। খানিক অভিযোগের সুরেই তিনি বলতেন, ঠাকুর এলেন আর দু’দিনের জন্য আনন্দ করে লীলা করে চলে গেলেন- তা হবে না। ঠাকুরের নাম নিয়ে যারা ঘর ছাড়ল, তাঁরা কি পথে পথে ভিক্ষে করে খাবে! মা হয়ে সন্তানের এই দশা তিনি দেখতে পারবেন না। ঠাকুরের কাছে তাই তাঁর প্রার্থনা, ভক্তদের যেন মোটা ভাত কাপড়ের অভাব না হয়। তারা যেন ঠাকুরের নাম নিয়ে, ভাব-উপদেশ নিয়ে একত্রে এক জায়গায় থাকতে পারে।

এই ভাবনাই তো পরবর্তীকালে জন্ম দিয়েছে রামকৃষ্ণ সংঘের। তাই তো তিনি সংঘজননী। একাধারে তাই তিনি লক্ষ্মী এবং সরস্বতী। অপ্রকাশের লীলায় নিজেকে প্রকাশ করেননি কখনও। তবু তাঁর পায়ের ছাপ যেন আলপনা হয়ে আঁকা আছে সর্বত্রই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...