সিগনেচার চিকেন ৬৫

‘চিকেন ৬৫’। ঝাল-টক আর হাল্কা কারিপাতার গন্ধ। স্টার্টার হিসেব খুব প্রিয় এক পদ। মশলায় ভাজা মুরগী পিস। চিকেনপ্রেমীদের অত্যন্ত প্রিয় এই পদে হঠাৎ সংখ্যা কেন যোগ হল ভেবে দেখেছেন?

স্বাদে ব্যস্ত মন কখনও কখনও নামের খোঁজও করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। ‘চিকেন ৬৫’ নিয়ে তাই রহস্যের শেষ নেই।

৬৫ টুকরো করা হয় তাই কি চিকেন ৬৫? তাই যদি হয় তাহলে সেই মুরগির আকারে কেমন?

নাকি ৬৫ রকম মশলা দিয়ে রান্না করে হয় এই পদ? কেউ কেউ আবার বলেন ৬৫ দিন বয়সী মুরগী ব্যবহার করা হয় এই পদ তৈরিতে। আর একটা মত আরও চমকানো তথ্য দেয়। বলে, চিকেন ৬৫ আসলে ৬৫ দিন ধরে ম্যারিনেট করে রাখা হয়।

 

Chicken652

 

৬৫ রহস্যে আরও এক গল্প আছে। যদিও সেই গল্প খুব বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। চেন্নাইয়ের সেনা ব্যারাকের উত্তর ভারতীয় সৈনিকরা তামিল ভাষা খুব বুঝতে পারত না। তাই খাবার সময় মেনু তালিকায় ৬৫ নম্বরে মুরগীর পদ দেখিয়ে দিত তারা। সেই পদই চিকেন ৬৫ নাম হয়ে যায়।

কিন্তু কোন সেনা ব্যারাকে মেনু তালিকার ৬৫ নম্বরে মাংসের পদ কষ্ট কল্পনাতেও ঠিক ভাবা যায় না!    

তবে চিকেন ৬৫ এর নাম রহস্য ঘোরাফেরা করে চেন্নাই অঞ্চলেই। সমাধান পেতে হলে পৌঁছতে হবে মাউন্ট রোডে। বুহারি রেস্তোরাঁয়।  

১৯৬৫-এ জন্ম হয় এই রেস্তোরাঁর। মালিক এ এম বুহারি। তিনিই শুরু করেন। চিকেনের রেসিপি নিয়ে নানা রকম পরীক্ষানিরিক্ষা চলত বুহারির হেঁশেলে। একে একে তৈঋ হয় চিকেন ৭৮, চিকেন ৮২, চিকেন ৯০। এদের জন্ম সাল যথাক্রমে ১৯৭৮, ’৮২ এবং ’৯০। শোনা যায় যে, নতুন বছরে বুহারির হোটেলে কয়েক জন অতিথি এসেছিলেন। তাঁদের জন্যই চিকেনের একটি স্পেশ্যাল রেসিপি বানান হোটেলর শেফ। সেটি খাওয়ার পর অতিথিরা পদটির নাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন বুহারিকে। নাম জানা ছিল না তাঁর। সালটা যেহেতু ১৯৬৫ তাই দুম করে তিনি বলে দেন পদের নাম ‘চিকেন ৬৫’

 

Chicken651

 

সেই নামেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে পদ। আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বুহারি রেস্তোরাঁ। এ এম বুহারি আদ্যন্ত ভোজনরসিক মানুষ ছিলেন। খাওয়াদাওয়া ছিল তাঁর প্যাশন। রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রেও প্রবলভাবে কাজ করেছিল সেই প্যাশন। ১৯৫১ সালে সকলের জন্য দরজা খুলে যায় এই রেস্তোরাঁর। হোটেলের বোন চায়নার বাসনপত্র লন্ডন আনা হয়েছিল। ‘জক বক্স’ এসেছিল বিদেশ থেকে। অতিথিদের পছন্দমতো গান চলত। সেই জকবক্স ছিল আলাদা আকর্ষণ। সমস্ত আদবকায়দা ছিল ব্রিটিশ স্টাইলে। কিন্তু খানা একেবারে দেশি।

এ এম বুহারি তাঁর প্রতিষ্ঠানকে অতিথিদের চোখে অভিনব করে তুলতে নানা ভাবনা ভেবেছিলেন। কিন্তু শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন তাঁর মাস্টারশেফ। যার নাম আড়ালে থেকে গেলেও অমর হয়ে আছেন রসনাপ্রেমীদের ভালোবাসায়। বুহারি রেস্তোরাঁর ‘সিগনেচার’ চিকেন ৬৫। চেন্নাইয়ের এক ছোট্ট হেঁশেল থেকে আজ ছড়িয়ে পড়েছে সারা পৃথিবীর খাবার টেবিলে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...