তিনি যখন সুস্থ ছিলেন, তখন নিজের বহু পান্ডুলিপি, নথি, চিঠি পুরসভার জঞ্জাল ফেলার গাড়ি ডেকে তুলে দিয়েছিলেন। এখন তাঁর শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকুও মুছতে চলেছে কলকাতার বুক থেকে।
৩৮, পদ্মপুকুর রোডের এই বাড়িতেই আমৃত্যু থেকেছেন মৃণাল সেন। ছবির চিত্রনাট্যও তৈরি হত দেশপ্রিয় পার্কের লাগোয়া এই বাড়িটিতে বসেই। একসময় পদ্মপুকুরের এই ফ্ল্যাটটি ছিল কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম আকর্ষণ। বিশেষ করে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের কাছে। বহু ঘটনার সাক্ষী। এবার সেই ফ্ল্যাটটি বিক্রির পথে।
এই ফ্ল্যাটেই রাখা ছিল মৃণাল সেনের অধিকাংশ চিঠি, ছবির পাণ্ডুলিপি, সিনেমার স্টিল ছবিসহ দেশ-বিদেশ থেকে পাওয়া পদক, উপহার, স্মারক ইত্যাদি।
গত ডিসেম্বরে মৃণাল সেনের মৃত্যুর পর তাঁর চিঠি, ছবির পাণ্ডুলিপি, চিত্রনাট্যসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা সংক্রান্ত নথি বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অনুরোধে চলচ্চিত্রের পড়ুয়াদের গবেষণার জন্য পাঠানো হয়। বিভিন্ন গ্রন্থাগার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর সংগ্রহে থাকা বইগুলো। এ ছাড়া মুম্বইয়ের একটি সংগ্রহশালায় দেওয়া হয়েছে মৃণাল সেনের ব্যবহার করা বিভিন্ন স্মৃতিবাহী স্মারক। তাঁর ব্যবহার করা চশমা ও টেলিফোন নিয়েছে বহরমপুরের সিনে সেন্ট্রাল। কলকাতার সল্টলেকের আল আমিন মিশনেও দেওয়া হয়েছে কিছু বই। আর যে খাটে তাঁর জীবনাবসান হয়, সেই স্মৃতিবাহী খাটসহ আনুষঙ্গিক কিছু জিনিস দেওয়া হয়েছে বিমান বসুর হাতে। তিনি বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও কলকাতার পিপলস রিলিফ কমিটির সভাপতি।
বেশ কিছু পারিবারিক জিনিস তাঁর সিনেমায় অভিনয় করা অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরকেও দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুত্র কুনাল সেন জানিয়েছেন, “তিনি এবং তাঁর স্ত্রী নিশা বিদেশে থাকেন। কলকাতায় আসাও অনিয়মিত। তাই ফ্ল্যাটের দেখভালে সমস্যা হচ্ছিল”।
কুনাল বসু বিদেশ থাকাকালীন তাঁদের পারিবারিক চিকিৎসক ফ্ল্যাটের দেখাশোনা করতেন। কিন্তু তাঁর পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।