রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে আসরে পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বেশ কিছু রদবদল করতে চেয়েছিলেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা যাতে সুষ্ঠুভাবে করা হয়, দালাল রাজ যাতে বন্ধ হয়ে যায়, সাধারণ মানুষ যাতে খুব কম খরচে চিকিৎসার সুবিধা পায়, তার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। মনে আছে, মাঝে মাঝে সারপ্রাইজ ভিজিট দিতেন সরকারি হাসপাতালগুলিতে। সব কিছু ঠিকঠাক চলছে কি না তা নিজের চোখে দেখার জন্য। চালু করেছেন 'ফ্রি মেডিসিন' বিভাগ। কিন্তু এত কিছু করেও সন্তোষজনক ফল পাচ্ছেন না তিনি। বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়ার কারনে সরকারি কোষাগার থেকে প্রচুর খরচ হয়ে যাচ্ছে। আয়ের ভাঁড়ার থেকে যাচ্ছে শূন্য। তাই কিছু অন্যরকম করতে হবে তা ভাবনাতেই ছিল। সেই মত কাজ শুরু করা গেছে এবারে।
গত বছর ২৬ মে পিজি হাসপাতালে ‘উডবার্ন ওয়ার্ড’ খুলে দেওয়া হয়েছিল সকলের জন্য। যেখানে ন্যূনতম কিছু টাকা দিলে মিলবে বিখ্যাত ডাক্তারদের চিকিৎসা। আবার বেসরকারি হাসপাতালের মত টাকার বান্ডিল খরচ করতে হবেনা রোগী বা তার আত্মীয়দের। একতলা এবং দোতলা মিলিয়ে মোট ১৬টি কেবিন। তার মধ্যে ১০টি ছোট কেবিনের ভাড়া কেবিনপিছু ২৫০০টাকা এবং বড় ৬'টি কেবিনের ভাড়া কেবিনপিছু ৪০০০ টাকা।
আধুনিক বেড, দামি সোফা, আসবাব, ঘরের বাইরে সাদা মার্বেলে মোড়া চওড়া বারান্দা, ব্রিটিশ আমলের ইজিচেয়ার উপরি পাওনা রোগীদের। ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার সংমিশ্রনে তৈরী নতুন এই অংশের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল 'ওয়ান উইন্ডো' ব্যবস্থা। হাসপাতালে রোগীকে ইমার্জেন্সিতে দেখানোর পরে রোগীর ইচ্ছানুসারে ডাক্তারবাবু উডবার্ন ভর্তি লিখে দিলেই হয়ে যাবে এখানে ভর্তির সুযোগ। তারপর রোগীকে নিয়ে উডবার্ন এলে সবকিছুর দেখাশোনা করবে উডবার্নের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থা।
তার ফলে এক বছর এক মাসে ৪৮৯ রোগী এবং সরকারি লভ্যাংশ ৭৮ লক্ষ ১৩ হাজারের কিছু বেশি। মাসে আয় ছয় লক্ষ টাকা! মন্দ নয় মোটেই। স্বাস্থ্যভবনের হিসাব অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রীর ফ্রি মেডিসিন প্রকল্পের জন্য গত বছরে যেখানে ১২০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, সেখানে আশার আলো দেখাচ্ছে পিজি হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ড।
২৬শে মে থেকে এখনও পর্যন্ত উডবার্ন থেকে আয় হয়েছে এক কোটি ৫৭ লক্ষ সাত হাজার ২৩১ টাকা। এর মধ্যে ২৫ লক্ষ ৮৪ হাজার ৭০০ টাকা আয় হয়েছে শুধুমাত্র বেডভাড়া থেকে। ১১ লক্ষ ২২ হাজার ৫৩১ টাকা আয় হয়েছে অপারেশন, রোগ ও রক্ত পরীক্ষা থেকে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো সারা রাজ্যে এই মডেলের নার্সিংহোম-এর সুবিধা সম্বলিত ঝাঁ চকচকে সরকারি হাসপাতাল চালু হলে সরকারি আয় কয়েকশো গুণ বাড়বে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তার পাশাপাশি রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতাল/নার্সিং হোমগুলি কিছুটা চাপে পড়ে খরচ কমাতে বাধ্য হবে। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হলে আখেরে লাভ হবে সাধারণ মানুষের।