রপ্তানি বাণিজ্যে মধু প্রসেসিং নিয়ে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। আপাতত বেসরকারি সাহায্য ছাড়াই রাজ্যের উদ্যান পালন দপ্তর সমবায় ব্যাঙ্কের আর্থিক সাহায্য নিয়ে দেগঙ্গায় গড়ে উঠতে চলে মধু রপ্তানির কেন্দ্রস্থল। এই মধু হাবে অংশীদারি হতে চলেছেন মৌমাছি পালক এবং মউলিরাও। এই খাতে বিনিয়োগের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা। এই উদ্যোগের সামিল হতে সমবায় সমিতি গড়ে তোলা হচ্ছে মউলি এবং মৌমাছি পালকদের নিয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে নেতৃত্ত্ব দিতে চলেছেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক।
প্রকল্পটির নাম 'সুন্দরবন হানি হাব' রাখবার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে নবান্নে। এই প্রস্তাবে প্রসেসিং ইউনিটে প্রতিদিনের উৎপাদন ক্ষমতা হতে চলেছে ৩০০ কিলো। এই ইউনিটটি স্থাপনের উদ্দেশ্যে বিশ্বনাথপুর ক্যাম্পে এক একর জমি বেছে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আধুনিক ব্যবস্থা সম্পন্ন ল্যাবরেটরি, সংগ্রহ করবার কাউন্টার, প্যাকেজিং, স্তর মার্কেটিং কাউন্টারেরও ব্যবস্থা করা হবে। বাজারে চাহিদা বাড়াতে জোর দেওয়া হবে ব্র্যান্ডিং এর ওপর।প্রকল্পটির উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ব বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু ঝা জানান, দেগঙ্গা এবং সংলগ্ন এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি মৌমাছির বসবাস। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মউলিরা যারা সুন্দরবন ঘিরে রয়েছেনা তারা কেউই মৌমাছি চাষ করেন না। বন দপ্তরের অনুমতি নিয়ে বনের ভিতর থেকে মধুর চাক ভেঙে মধু সংগ্রহ করেন তারা। বর্তমানে ১৬ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদিত হয় রাজ্যে। সারা দেশের মধু উৎপাদনের পরিমান ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু রাজ্যের মধু রপ্তানিতে এখনো কোন ভূমিকা নেই। মধু ৬০ শতাংশ হাত ঘুরে মউলিদের থেকে অন্য রাজ্যে ঢুকে পড়ছে। অথচ রাজ্যের অভ্যন্তরীন বাজারে মধুর চাহিদা মাত্র ২ হাজার মেট্রিক টন।মধু হাব প্রকল্পটি চালু হলে মউলিরা আর্থিক ভাবে বিশেষ স্বচ্ছলতা পাবে বলে জানান অধ্যাপক শান্তনু।জানা যায় অক্টোবর থেকে এপ্রিল অব্দি মধু সংগ্রহ করা হয়।
রাজ্য সরকার-এর সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মউলিদের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ।এখানকার মউলিরা চর্মনগরী জেলাগুলিতে সর্ষেক্ষেত, আমবাগান কখনো বা ফুলের ক্ষেত ঘুরে চার-পাঁচ সপ্তাহ ধরে মধু চয়ন করে থাকে। চাক তৈরী করে না এখানকার মৌমছিরা। সুন্দরবনের বনফুলের মধুর বেশ চাহিদা রয়েছে বিশ্ববাজারে। এছাড়া মিন, পদ্মফুল, কমলা, আম, লিচু, মধুর চাহিদা বেশ লক্ষণীয় বাজারে।