রাত জাগা তারা দেখার বয়স তো সেই কোন ছোটোবেলাতেই শেষ হয়ে গেছে। মধ্যবয়সে এসে চলমান উজ্জ্বল তারা বিদেশভূমিতে দেখতে পাবো কস্মিনকালেও ভাবিনি। দু’বছর হলো নেদারল্যান্ডে সপরিবারে বঙ্গসংস্কৃতি সমৃদ্ধ ‘হৈ চৈ’ নামে সংস্থার দৌলতে দুর্গাপুজো বেশ উপভোগ করছি। গতবছর নেদারল্যান্ডে গিয়ে শুনি দারুন চমক অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। ২০০৫ সালে প্রথম Indian Idol -এর রানার আপ অমিত সানাকে নিয়ে আসছে ‘হৈ চৈ’ বিজয়া সম্মিলনীর দিন সন্ধ্যেবেলায়। শোনামাত্র আমার উত্তেজনার পারদ চরচর করে উঠতে লাগল কারণ আমি অমিত সানার দারুন ভক্ত। টিভিতে Indian Idol চলাকালীন ওর একটা episode-ও আমি বাদ দিইনি। সরাসরি অমিত সানার মত সেলিব্রিটিকে দেখার, ওর গান শোনার তোড়জোড় শুরু করে দিলাম। অনুষ্ঠানের দিন অনেক আগে থেকেই Amstelveen এর Diamant Partycentrum-এর হল-এ একটা দ্বিতীয় সারির মাঝখানে যেখান থেকে অমিত সানাকে স্পষ্ট দেখা যাবে সেখানে একটা বসার চেয়ার বাজেয়াপ্ত করে নিলাম। খুবই পরিচিত এক হৈ চৈ সদস্যকে ভুলিয়ে ভালিয়ে অমিত সানার সাথে একটা ফটোও তুলে ফেললাম। আহা! যদি সেই ফটো আজ পোষ্ট করতে পারতাম এখানে!
কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল অমিত সানার লাইভ পারফরম্যান্স অসাধারণ পেশাদারিত্ব এবং বিপুল এনার্জি নিয়ে স্টেজে ঢুকেই half the battle জয় করে নিল। কিন্তু ‘পিকচার’ তখনো অনেক বাকি। এরপর যাদুকন্ঠে ধরল গান আর আবেগতাড়িত শ্রোতাদের একেবারে তালুবন্দি করে নিল এক নিমেষে। কখনো শ্রোতাদের মাঝে চেয়ারের ওপরে দাঁড়িয়ে, কখনো বা নীচে নেমে এসে শ্রোতাদের সামনে মাইক ধরে ওর সঙ্গে গাইতে অনুরোধ করল। আমি তো ভয়ে কাঁটা। বুক ধড়পড়ানি শুরু হয়ে গেল। এই রে, ছেলেটা আবার আমার কাছে আসবে নাকি! আমিতো নাগালের মধ্যে গ্যাট্ হয়ে বসে আছি। হিন্দিই বলতে পারি না, তার ওপর হিন্দিতে গান! কিন্তু পাশে বসা আমার বউমণি সে যাত্রায় আমাকে উদ্ধার করে দেয়।
এত মনোজ্ঞ এক অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য ‘হৈ চৈ’ কে অন্তর থেকে কুর্ণিশ জানালাম। পূজা পার্বন পরিচালনায় ‘হৈ চৈ’ যেমন কুশলী, অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় তারা ততটাই পারদর্শী। তাদের চিন্তাধারা, তাদের কর্মধারা খুবই সামঞ্জস্যপূর্ন। শিক্ষা সংস্কৃতিতে ‘হৈ চৈ’ সদস্যরা কানায় কানায় পূর্ণ। ‘হৈ চৈ’ এর প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে গেল।
অমিত সানার ‘চল দিয়ে’ গানটি গুন গুন করে গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরছিলাম। মনে হল রাস্তার দু পাশ থেকে শিউলি ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। মাতৃ আরাধনায় মনটা, মেজাজটা, পরিবেশটাই তো আসল রাজা। এটা ভাবতে ভাবতেই লিখে ফেললাম—
মায়ের বোধন পূর্ণ হল,
তারাদের ভিড়ে–
আশি- অষ্টাদশীরা সব,
মেলল ডানা উড়ে।
গানের সুরে মাতল ভুবন,
মায়ের মুখে হাসি–
অমিত সানা সেরা তারা,
যেন রাত জাগানো বাঁশি।
(Bengali Community of The Netherlands ' হৈ চৈ'-এর তরফে প্রবাসে বসে প্রবন্ধটি লিখেছেন: মধুমিতা দাশগুপ্ত)
বিশদে জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্ক-