সুচিত্রা সেন-বসন্ত চৌধুরী অভিনীত বিখ্যাত ছবি 'দ্বীপ জ্বেলে যাই' ছবির সেই গানটা মনে পড়ে যাচ্ছে, হেমন্তের সুরে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখায় আর মান্না দে'র গাওয়া বিখ্যাত সেই গান - 'এমন বন্ধু আর কে আছে?'। ভাবছেন তো হঠাৎ এই গানটি কেন? কারণ, আনন্দ, দুঃখ, প্রেম, মান-অভিমান সব অনুভূতিতেই আমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো জুড়ে যায় 'গান'; সত্যিই তো এমন বন্ধু আর কেই বা আছে! গান শোনে না এমন মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া দায়, একথা নেহাতই অত্যুক্তি নয়। কখনও কথা, কখনও সুর, মন-মাথার নিরাময়ের অব্যর্থ ওষুধ গান। তা সেই গানের একখানা 'স্পেশাল' গালভরা দিন থাকবে না তাও কি হয়?
ঠিক এই প্রশ্নটাই মাথায় এসেছিল ফ্রান্সের একটি রেডিও স্টেশনে কর্মরত আমেরিকান সঙ্গীতজ্ঞ জোয়েল কোহেন-এর। সত্তরের দশকে তিনিই প্রথম ফরাসি সরকারের কাছে 'বিশ্ব সঙ্গীত দিবস' পালনের প্রস্তাব রাখেন। ১৯৮১ সালে ফরাসি সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে, সে দেশের কমপক্ষে দু’টি শিশুর মধ্যে একজন কোনও না কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারদর্শী, এই বিষয়টিই চমকে দেয় ফ্রান্সের সংস্কৃতিমন্ত্রী জ্যাক ল্যাংকে। 'গান হবে মুক্ত সংশয়হীন'-এই স্লোগান নিয়ে ১৯৮২ সালে ফ্রান্সে 'ফেত দ্যা লা মিউজিক' বা 'মেক মিউজিক ডে' নামে সারাদিনব্যপী একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। পরবর্তীতে ২১ জুন দিনটিকে বেছে নিয়ে যা সারা বিশ্বব্যাপী 'ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে' বা 'বিশ্ব সঙ্গীত দিবস' হিসেবে পরিচিত হয়। ভারত সহ মোট ১২০টি দেশে পালিত হয়ে আসছে এই দিনটি।
তবে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, আশির দশক থেকে প্রতিবছর এই দিনটি পালিত হয়ে আসলেও এখনকার মতো 'গান ডে' নিয়ে উত্তেজনা তখন ছিলনা। সঙ্গীতপ্রেমীরা তো বটেই বিশ্বায়ণ, প্রযুক্তি, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এর জন্য এই দিনটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষও এখন ওয়াকিবহল হয়ে উঠেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি, রেডিও সবধরনের মিডিয়াতেই এখন এই দিনটি নিয়ে উত্তেজনার পারদ থাকে তুঙ্গে। সারাদিনব্যপী বিভিন্ন সঙ্গীতানুষ্ঠানে মজে থাকে আপামর বিশ্ববাসী। আর গোটা একটা দিন যদি গানে গানেই কেটে যায় ক্ষতি কি! কারণ সারা বছরে 'এ শুধু গানের দিন, এ লগন গান শোনাবার...'।