আজ কালী কথায় কালীক্ষেত্র বীরভূমের কথা। শক্তিপীঠের উপস্থিতি বীরভূমকে অন্যতম সেরা কালীপীঠের আসনে বসিয়েছে। বামাক্ষ্যাপার স্মৃতিবিজড়িত জেলায় রয়েছে দক্ষিণা চামুণ্ডাকালী দেবীর মন্দির। দেবীর থান রয়েছে উদয়পুরে। তারাপীঠ মন্দির থেকে সামান্য দূরেই রয়েছে উদয়পুর গ্রাম। মন্দিরে দেবীর কোনও মূর্তি নেই।
গ্রামের শেষ প্রান্তে সমতলছাদ বিশিষ্ট মাতৃ মন্দির। মন্দিরের রঙ লাল। গর্ভগৃহে রয়েছে মায়ের শিলা মুর্তি। শিলাখণ্ডে ধাতু দিয়ে চোখ, নাক, জিহ্বা, ঠোঁট নির্মাণ করে কালী রূপ দেওয়া হয়েছে। মন্দিরের সামনেই সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো প্রাঙ্গণ। সামনে যূপকাষ্ঠ পোঁতা। পাশেই রয়েছে ছোট ছোট শিবমন্দির আছে। একদা মাটি দিয়েই তৈরি হয়েছিল মন্দিরটি। এখন পাকা মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। শোনা যায়, খোদ বামাক্ষ্যাপা এখানে মায়ের পুজো দিতে আসতেন।
বীরভূমে দ্বারকা নদের তীরে তারাপীঠের তারা মা, মুণ্ডমালিনীতলার তারা মা এবং উদয়পুরে দক্ষিণা চামুণ্ডা মা, এই তিনটি কালীক্ষেত্র মিলিতভাবে ত্রিভুজাকৃতির ক্ষেত্র তৈরি করেছে। যার সঙ্গে তন্ত্রের কুণ্ডলিনীর মূলাধারে ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্না, তিনটি নাড়ির তুলনা করা হয়। মনে করা হয়, তন্ত্রশক্তির ত্রিদেবী উপাসনার প্রাচীন সংযোগ রয়েছে এর সঙ্গে।
তিন কালীক্ষেত্রেই আসতেন বামদেব। তারাপীঠ মহাশ্মশান থেকে দ্বারকাতে স্নান করতে নেমে মুণ্ডমালিনীতলায় তারা মায়ের কাছে যেতেন বামদেব, তারপর পুজো সেরে ফের দ্বারকার জলে ভেসে উদয়পুরে চামুণ্ডা কালী মায়ের কাছে যেতেন। পুজো সেরে আবার দ্বারকার জলে সাঁতরে তারাপীঠ মহাশ্মশানে ফিরে আসতেন। মুণ্ডমালিনীতলা থেকে পায়ে হেঁটেও উদয়পুরে যেতেন বামদেব। মায়ের শীলাময়ী রূপের পুজো করতেন। প্রতি অমাবস্যায় এবং বিশেষ তিথিতে বামদেব, তারা মায়ের জন্য নিজে ভোগ রান্না করে তিনটি মালসা নিয়ে, মাথায় করে মুণ্ডমালিনীতলায় নিয়ে গিয়ে তারামায়ের উদ্দেশ্যে ভোগ নিবেদন করতেন। ফি বছর কালীপুজোর দিন বামদেব সারা রাত ধরে তারাপীঠে তারা মায়ের পুজোর পরে, পরদিন ভোরবেলায় উদয়পুরে দক্ষিণা চামুণ্ডা কালীর পুজো করতে চলে যেতেন। মায়ের পুজো করে, তারপর তিনি মুখে অন্ন তুলতেন।
এই তিন মন্দির ঘিরে রয়েছে হাড়হিম করা এক জনশ্রুতি। শোনা যায়, গভীর রাতে প্রায়ই মা তারা তারাপীঠ মন্দির থেকে বের হয়ে মুণ্ডমালিনীতলায় মুণ্ডমালা খুলে রেখে বিশ্রাম করে উদয়পুরের কালীমন্দিরে যান। এককালে উদয়পুর দক্ষিণা চামুণ্ডা কালীর পুজোয় প্রচুর ছাগবলি হত। এতই ছাগবলি হত যে, মন্দিরের পাশের দিঘি বলির রক্তে লাল হয়ে যেত। এখন বলির সংখ্যা কমে গিয়েছে। আজও কালীপুজোর সময় উদয়পুরে বিশালাকার কালীমূর্তি তৈরি করে, পুজো করা হয়। প্রতি বছরেই তারা মায়ের পুজোর পর, তারাপীঠ মন্দিরের পূজারীরা উদয়পুরে দক্ষিণা চামুণ্ডা কালীর কাছে পুজো দেন। প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়।