কালী কথা: ত্রিকুল কালী মন্দির

দক্ষিণ দিনাজপুরের জলঘরের ত্রিকুলে রয়েছে মা ত্রিকুল কালীর মন্দির। বালুরঘাট থেকে প্রায় আট কিলোমিটার উত্তরে সীমান্ত সংলগ্ন জলঘর গ্রামের মন্দিরে চৈত্র শেষের গভীর রাতে ত্রিকুল রক্ষাকালী মায়ের পুজো শুরু হয়। প্রায় ১৮৩ বছর যাবৎ দেবী কালীর পুজো হচ্ছে ত্রিকুলে, ত্রিকুল হল এপার বাংলার সীমান্তবর্তী গ্রাম। কথিত আছে, অবিভক্ত বাংলার সাত জমিদার সাত এলাকায় দেবী কালীর পুজো শুরু করেছিলেন। দেবীরা হলেন সাত বোন। চারজন আছেন এপার বাংলায় আর অন্য তিনজন আছেন ওপার বাংলায়। স্থাননামেই দেবীদের নামকরণ করা হয়। বোল্লা কালী তার মধ্যে অন্যতম। ত্রিকুল কালীর পুজো হয় চৈত্র সংক্রান্তিতে। পুজোয় মা বোল্লা কালীর মাটি ব্যবহৃত হয়। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে মায়ের পুজো হয়।

ত্রিকুল রক্ষাকালী মায়ের পুজোকে কেন্দ্র করে গোটা গ্রামের ঘরবাড়ি সেজে ওঠে। প্রতি বছরই মেলার আগে বাড়ির দেওয়াল রাঙিয়ে তোলেন মহিলারা। মেলা উপলক্ষ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় মন্দির চত্বরে। গ্রামের মধ্যে দিয়ে হেঁটে মন্দিরে যান বহু মানুষ। পুজো এবং মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় পরিজন সমাগম হয়। প্রতি বছর এই পুজোকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। পুজো ও নববর্ষ, দুই উৎসবকে ঘিরে আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের প্রতিটি মাটির বাড়ি নিজ হাতেই রাঙিয়ে তোলেন গ্রামবাসীরা। ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ত্রিকুলের এই মেলাকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা নয় পার্শ্ববর্তী জেলা ও গোটা বাংলা থেকে বহু মানুষ ভিড় জমান। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে এই মন্দিরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

Trikul kali

সারা রাত ধরে ত্রিকুল কালীর পুজো চলে। সারা রাতব্যাপী ভক্ত সমাগম হয়। বিপুল পরিমাণ সোনার গয়নায় সেজে ওঠেন মা। এখানে দেবীর গাত্র বর্ণ নীল। তিনি চতুর্ভুজা। দেবীর উচ্চতা প্রায় সাড়ে সাত ফুট। পদতলে থাকে শ্বেতশুভ্র মহাদেব। দেবীর হাতে থাকে কদমা। অনেকেই মনোস্কামনা পূরণের জন্য দেবীর কাছে কদমফুল নিবেদন করেন। শোলার কদমফুল বেঁধে আসেন তাঁরা।

মায়ের দর্শনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্তরা। কদমা ও খাজা-বাতাসা দিয়ে তাঁরা মানত করেন মন্দিরে। মন্দির প্রাঙ্গণ লাগোয়া আটচালায় মানতের ছোট কালী মূর্তিতে পুজো দেন ভক্তেরা। কথিত রয়েছে, একসময় ভারত বাংলাদেশ বর্ডার না থাকার কারণে ওপার বাংলা থেকেও হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ঢল নামত। ভক্তদের বিশ্বাস, এলাকার সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি সবই মা ত্রিকুল কালীর কৃপা। এই মেলাকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠেন এলাকার বিভিন্ন ধর্মের মানুষ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষার দিক থেকেও ত্রিকুল কালী কার্যত নজির হয়ে দাঁড়িয়ে। দেবীর পুজো ও পুজোকে কেন্দ্র করে বসা মেলা পরিণত হয় বহু ধর্মের মিলনক্ষেত্রে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...