কালী কলকাত্তাওয়ালী। কলকাতা শহরের নামেই লেগে আছে কালী নাম। সপ্তদশ শতাব্দীতে যখন কলকাতা আদৌ কলকাতা হয়ে ওঠেনি তখনও সেই জল জঙ্গলের ভূমিতে কালীমন্দিরের অস্তিত্ব ছিল। বাংলা জুড়েই যেমন অসংখ্য কালী মন্দির। ভিন্ন ভিন্ন নাম, ভিন্ন ভিন্ন রূপ। কখনও করালবদনা রুদ্রচন্ডা রূপে পূজিতা হন, আবার কখনও প্রসন্নবদনা ক্ষমাদাত্রী মাতৃমূর্তি।
রাঢ় বঙ্গ সংস্কৃতির অনেক গভীরে শাক্ত সংস্কৃতির শিকড়। ধনী জমিদার গৃহে তো বটেই গ্রামের দরিদ্র মানুষের মধ্যেও চল ছিল কালীপুজোর। অন্ত্যজ মানুষদের মধ্যেও তার প্রসার।
কলকাতাতেও কালীপুজোর ইতিহাসের ধারাটা এভাবেই চলে এসেছে। স্থান ভেদে বদলে গিয়েছে দেবী কালিকার বিগ্রহ এবং নাম।
তেমনি চিত্র দেখা যায় কলকাতার উত্তরে ছাতু বাবুর বাজারের কাছে। বাজারের ব্যস্ততাকে পিছনে ফেলে কিছুটা দুর এগিয়ে গেলেই লাল রঙ এর মন্দির। লাল রঙের এই মন্দিরটিই ‘ বসা কালীর মন্দির’ নামে পরিচিত। ‘আনন্দময়ী মায়ের মন্দির’ হিসেবেও যার পরিচিতি আছে। আদি নাম ‘সিমুলিয়া আনন্দময়ী কালী’।
এই মন্দির স্থাপন করেন মোতিলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। স্থাপিতসন ১১২৫ সাল। তিনি স্বপ্নাদেশ পান জঙ্গলে ঢাকা উত্তরের ভূমিতে দেবী আনন্দময়ী অবস্থান করছেন। সন্ধান করতে গিয়ে খুঁজে পাওয়া গেল দেবীর বিগ্রহ। কিন্তু সেই মূর্তি প্রচলিত কালিকা মূর্তির থেকে একেবারেই আলাদা। শিবাসনে উপবিষ্ঠা দক্ষিণাকালী মূর্তি।
জঙ্গল ও সংশ্লিষ্ট এলাকা ছিল স্থানীয় মিত্র পরিবারের অধিকারে। তাঁরাই মোতিলালবাবুকে অনুমতি দেন এখানে মন্দির নির্মাণের। তৈরি হয় আনন্দময়ীর মন্দির।
মন্দিরের নাটমন্দির লাগোয়া গর্ভমন্দিরে গেলে দেখা যায় শায়িত শিবের বুকের ওপর দেবী কালী পদ্মাসনে উপবিষ্ঠা। আলুলায়িত কেশ বুকের উপর। দেবী বসন, ভূষণে সুসজ্জিতা। বিগ্রহ নির্মিত হয়েছে মাটি দিয়ে। প্রসন্নবদনা, ঘন ঘোর কৃষ্ণবর্ণা আনন্দময়ী দক্ষিণা কালিকা। মহাদেবের মাথা দেবীর ডান দিকে। সেই দিকেই দেবীর পাহারাদার কালভৈরব মূর্তি।
কলকাতার প্রাচীন কালী মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম। অমাবস্যা, একাদশী ও অম্বুবাচী তিথিতে দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয় শোলমাছ দিয়ে।
দীপান্বিতা অমাবস্যা তিথিতেও উৎসব হয় এই মন্দিরে।