শিবরাম চক্রবর্তীর দেবতার জন্ম নিশ্চয়ই পড়েছেন? আজকের পর্বের কালীকথায় তেমনই এক কালী মন্দিরের গল্প। দেবীর নাম সার্ভিস কালী। কালী-কার্তিকের শহর সোনামুখীতে দেখা মিলবে এই কালী মন্দিরের। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই মন্দিরে দেবীর কাছে মানত করলেই নাকি চাকরি মেলে। গত আট দশক যাবৎ এই বিশ্বাসে ভর করে সার্ভিস কালীর পুজো করে আসছেন বাঁকুড়ার সোনামুখীর মানুষজন। আজ দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন এখানে পুজো দিতে আসেন।
বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে সোনামুখী পৌরসভা অবস্থিত। সোনামুখী পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে সার্ভিস কালীর মন্দির। যতদিন যাচ্ছে তত মন্দা ঘনাচ্ছে চাকরির বাজারে, ততই সোনামুখীর সার্ভিস কালীর মহিমা ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-দেশান্তরে। ষোলো আনা সার্ভিস কালী মন্দিরে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই থেকেও বহু মানুষ চাকরির মনস্কামনা নিয়ে ছুটে আসেন। সোনামুখী শহরের প্রাচীন কালীপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম ষোলো আনা সার্ভিস কালী।
কথিত আছে দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। দেবীর কাছে চাকরি পাওয়া ও ব্যবসায় সমৃদ্ধির মনস্কামনা নিয়ে ভক্তরা আসেন। মনস্কামনা পূর্ণ হলে, তাঁরা ফের মন্দিরে এসে পুজো দিয়ে যান। শোনা যায়, একদা সোনামুখী শহরের ধর্মতলায় ষোলো আনার কালী নাম একটি পুজো হত। ৮২ বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনোমালিন্যের কারণে কালী পুজো দু'ভাগ ভাগ হয়ে যায়। স্থানীয়স্তরে জনশ্রুতি রয়েছে, সে সময় স্থানীয় এক পরিবহণ ব্যবসায়ী বাসের রুট পারমিট সংক্রান্ত সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। নতুন করে শুরু হওয়া পুজোয় তিনি কালীর কাছে মানত করেন। পারমিট সংক্রান্ত যে সমস্যা থেকে রেহাই মিলছিল না, মানত করতেই সে সমস্যা মিটে যায়। এরপর থেকেই কালীর মাহাত্ম্য দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। শোনা যায়, যুবকদের চাকরির মনস্কামনাও পূর্ণ করেন দেবী। তারপর থেকেই দেবী কালিকা লোকমুখে ষোলো আনা সার্ভিস কালী রূপে পরিচিতি পান।
মায়ের পদতলে শিব বিরাজ করেন। সঙ্গে থাকেন ডাকিনি, যোগিনী। দেবী চতুর্ভুজা। দেবীর গাত্র বর্ণ কালো। দেবী কালীর মায়ের গয়না বলতে তেমন কিছু ছিল না। এখন মা গয়নাতে পরিপূর্ণ। সার্ভিস কালী ভক্তদের মনোবাসনা পূর্ণ করলেই, তাঁরা মাকে গহনা দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। মন্দিরে মহাসমারোহে কালী পুজো হয়। দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজো উপলক্ষ্যে তিনদিনের উৎসব চলে রীতিমতো। সোনামুখীবাসীরা আনন্দে মেতে ওঠে। সোনামুখীর কালী ভাসানও দেখার মতো জিনিস। গোটা শহরজুড়ে অজস্র কালীপুজো হয়। ভাসানের দিন প্রতিটি কালীর শোভাযাত্রা বের। বাজনা, বাজি, আলোর রোশনাই, ফুলঝুরিতে সারা রাত ধরে চলা ভাসানপর্ব।