আজকের কালী কথায় কালীক্ষেত্র বীরভূমের কথা। বীরভূমের মল্লারপুরের সনকপুর গ্রামে পূজিতা হন কৃষ্ণ-কালী। মাঘ মাসে রটন্তী কালীপুজো হয়। গোটা বছরজুড়ে প্রতিটি অমাবস্যায় বিভিন্ন কালীপুজো হলেও একমাত্র রটন্তী কালী পুজো হয় চতুর্দশী তিথিতে। এই তিথিতে পূজিতা হন 'কৃষ্ণ কালী'।
কীভাবে সৃষ্টি হল দেবী 'কৃষ্ণ কালীর'?
পৌরাণিক ইতিহাস অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি বেজে উঠলেই শ্রীরাধা আর সংসারে মন দিতে পারতেন না। সংসার, লোকলাজ সবকিছু ত্যাগ করে তিনি ছুটে যেতেন শ্রীকৃষ্ণের কাছে। শ্রীরাধার শাশুড়ি এবং ননদ জটিলা এবং কুটিলা বহুবার এই ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন। কিন্তু শ্রীরাধার স্বামী আয়ান ঘোষকে তা বিশ্বাস করাতে পারেননি তাঁর মা ও ভগিনী। মাঘ মাসের কৃষ্ণাচতুর্দশীর রাতে ঘটল ঘটনা। কৃষ্ণের বাঁশি বেজে উঠল আর সেই বাঁশির আওয়াজ শুনে শ্রীরাধিকা বাড়ি ছাড়েন। হাতেনাতে ধরার জন্য তাঁর পিছু নেন জটিলা, কুটিলা। তাঁরা কুঞ্জবনে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে শ্রীরাধার মিলিত হওয়ার দৃশ্য চাক্ষুষ করে দ্রুত বাড়ি ফিরে আয়ান ঘোষকে নিয়ে যান কুঞ্জবনে। আয়ানকে শ্রীরাধিকার গোপন প্রেমের কাহিনি দেখাতেই হবে। আয়ান ঘোষ ছিলেন শক্তির উপাসক, কালী ভক্ত। শ্রীরাধিকা ভয় পাচ্ছেন কী করবেন তিনি? শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে আশ্বস্ত করলেন। আয়ান ঘোষ কুঞ্জবনে পৌঁছে দেখলেন তাঁর আরাধ্যা মা কালী গাছের তলায় বসে রয়েছেন আর নিজের কোলে তাঁর পদসেবা করছেন শ্রীরাধিকা। দেখে আপ্লুত হলেন আয়ান। তাঁর সাক্ষাৎ কালী দর্শন হল, এভাবেই কৃষ্ণ কালীর জন্ম।
সেই কৃষ্ণকালীই পূজিতা হন সনকপুরে। বীরভূমের মল্লারপুরের প্রান্তিক বৃহত্তর গ্রাম সনকপুর। সেখানেই মিলন ঘটেছে শাক্ত ও বৈষ্ণব ধর্মের। কৃষ্ণের সঙ্গে শ্রীরাধাকে দেখতেই অভ্যস্থ ভক্তকুল। কিন্তু সনকপুরে কৃষ্ণের সঙ্গে রয়েছেন কালী। তন্ত্র মতে দেবীর যে'কয়টি রূপের উল্লেখ পাওয়া যায়। তার মধ্যে কৃষ্ণ কালী অন্যতম।
মন্দিরের মূর্তিতে কৃষ্ণ ও কালীর যুগলবন্দী ঘটেছে। এই দুই মূর্তির সামনে পদতলে রয়েছে তিনটি মরার মাথা। দেবী এখানে বৈষ্ণব মতেই পূজিতা হন। ভক্তরা বলেন দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। তাই পুজোর ব্যাপারে সকলে অত্যন্ত সতর্ক। শোনা যায়, দেবীর মূল বেদী তৈরি হয়েছিল ১০০ টি মরার মাথার উপর। এখন মূল বেদীর পাশেই মন্দির গড়ে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানেই পূজিতা হন দেবী।