গঙ্গার দুই তীরজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে হাজারও কালীক্ষেত্র, গঙ্গা তীরের জেলা হুগলির রিষড়ার এক কালীর কথা আজকের কালী কথায়। মন্দিরের বয়স প্রায় ছ'শো বছরের বেশি। যা সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির নামে জনপ্রিয়। রিষড়ার বাঙ্গুর পার্কে প্রাচীন মন্দিরটি অবস্থিত। মনে করা হয়, অনুমানিক ৮১১ বঙ্গাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মন্দিরটি। মন্দিরে অজস্র ফলক হয়েছে, সবচেয়ে প্রাচীন ফলকে লেখা রয়েছে "সন ৮১১ সালে জটাধর পাকড়াশী কর্তৃক কালী ঠাকরানী প্রতিষ্ঠিত"। ৮১১ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৪০৪ সাল।
সিদ্ধেশ্বরী মা মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন। সিদ্ধেশ্বরী মায়ের লোল জিভ থাকে না, অর্থাৎ তিনি জিভ বের করে থাকেন না। কালীর গলায় নর মুণ্ডমালা থাকে। সিদ্ধেশ্বরী মায়ের গলায় মুণ্ডমালা নেই। আদপে মা কৃষ্ণকালীর আরেক রূপ। রিষড়ার সিদ্ধেশ্বরী কালীর মূর্তির চিরাচরিত কালীবিগ্রহের চেয়ে আলাদা। সাধকের ধ্যানলব্ধ মূর্তিতে পূজিতা হন দেবী। জনৈক জটাধর পাকড়াশী নামে এক তান্ত্রিক হুগলী জেলার রিষড়ার সাধনা করতেন। একদিন তিনি স্বপ্নাদেশ পান। বর্তমান মন্দিরের বাম পাশে এক দীঘিতে একটি ভাসমান ঘট দেখতে পান। ঘটটিকে জল থেকে তুললেন। তারপর গোলপাতা দিয়ে মন্দির তৈরি করলেন। স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী মায়ের কৃষ্ণবর্ণের দ্বিভুজা মূর্তি তৈরি করে নিত্য পুজো শুরু করেন।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, পঞ্চদশ শতকে যশোর সর্ষুনার জটাধর পাকড়াশী সস্ত্রীক রিষড়ার মোড়পুকুর গ্রামে চলে এসেছিলেন। গুরু ভাই আত্মীয় দুর্গাচরণ ঘোষের বাড়িতে এসে ওঠেন জটাধর। এই দুর্গাচরণ ঘোষই তাঁকে সিদ্ধেশ্বরী মন্দির সংলগ্ন জায়গাটি ব্রহ্মোত্তোর জমি হিসেবে দান করেছিলেন। সেখানেই থাকতে আরম্ভ করেন জটাধর পাকড়াশী। তৈরি হয় মন্দির।
রিষড়ার সিদ্ধেশ্বরী দ্বিভুজা, দেবীর ডান হাতে রয়েছে খড়্গ ও বাম হাতে নরমুণ্ড। এখন নবরত্ন মন্দিরে মায়ের নিত্য পুজো হয় দু'বেলা। মাতৃমূর্তির উচ্চতা ৬ ফুট তবে আর মৃন্ময়ী নয়, দেবী কালিকা এখন মর্মর মূর্তিতে বিরাজিতা। পাশেই রয়েছে মায়ের ভৈরব শিবের মন্দির। দেবী কালিকার পদতলে শিব থাকেন না, একপাশে শায়িত থাকেন।
রিষড়ার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী। সুধীর কুমার মিত্র তাঁর 'হুগলি জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ' বইতে ও কৃষ্ণগোপাল পাকড়াশী 'তিনশতকের রিষড়া ও তৎকালীন সমাজ চিত্র' বইতে সিদ্ধেশ্বরী কালীকে 'রিষড়ার গ্রামদেবী' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ১৩১২ বঙ্গাব্দ তারকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে দশঘড়া নিবাসী শ্রী ঈশ্বরচন্দ্র সাহা মন্দিরটি পুনঃনির্মাণ করে দেন। আজও পাকড়াশী বংশ মন্দিরের দায়িত্ব সামলায়। এছাড়াও আরও পাঁচ ঘর সেবায়েত রয়েছে। রিষড়াবাসীদের বিশ্বাস, মা সিদ্ধেশ্বরী তাঁদের আগলে রেখেছেন।