কালী কথা: রাজরাজেশ্বরী কালী মন্দির

মাতৃশক্তির এক রূপ হলেন রাজরাজেশ্বরী, কখনও তিনি দুর্গা আবার কখনও তিনি কালী। বাঙ্গুর অ্যাভেনিউয়ে রয়েছে রাজরাজেশ্বরী কালীবাড়ি। মন্দিরের বয়স ষাট বছরের বেশি। বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশন থেকে খানিক দূরে বাঙ্গুর অ্যাভিনিউ মোড়ে দমদম পার্কে কৃষ্ণপুর উপনগরে এই কালীবাড়ি অবস্থিত৷ মন্দিরটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৬১ সালে৷ মন্দিরের মাতৃ মূর্তি কালো কষ্টি পাথরে নির্মিত। দেবী কালিকা এখানে চতুর্ভুজা। চার হাতে খড়্গ, মুণ্ডমালা ও বরাভয় মুদ্রায় মহাদেবের বক্ষের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷ পদতলে শবরূপী শিব। দেবী শ্বেতপাথরের বেদির উপর অধিষ্ঠান করেন। দেবী বিগ্রহের উচ্চতা চার ফুট। দেবী সবসনা। সালঙ্কারাও বটে। দেবীর গলায় থাকে সোনার চন্দ্রহার৷ মাথায় থাকে সোনার মুকুট৷


শ্রীশ্রী করুণাময়ী রাজরাজেশ্বরী কালীভক্ত ট্রাস্ট মন্দির দেখভালের দায়িত্ব পালন করে। মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবী কালিকার বিগ্রহের পাশেই সিংহাসনে রয়েছে রাধা-কৃষ্ণের যুগলমূর্তি৷ মুরুলীমনোহর বাঁশি হাতে দন্ডায়মান থাকেন। রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদার বিগ্রহ৷ শ্রীজগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের বিগ্রহও রয়েছে।


বাংলায় আরও রাজরাজেশ্বরী কালী মন্দির রয়েছে। হুগলি জেলার কোন্নগরে প্রাচীন রাজরাজেশ্বরী কালী মন্দির অবস্থিত। ১১০৭ বঙ্গাব্দে এই রাজরাজেশ্বরী কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কালীবিগ্রহের দুই পাশে জয়া ও বিজয়ার মূর্তি এবং পদতলে শিব বিরাজমান। উত্তর কলকাতার আহিরিটোলাতেও একটি রাজরাজেশ্বরী কালী মন্দির রয়েছে।


মুর্শিদাবাদের লালগোলা রাজবাড়িতে রাজরাজেশ্বরী কালী পুজো হয়। লালগোলা রাজবাড়িতে কবে রাজরাজেশ্বরী কালী পুজোর শুরু হয়েছিল, তা জানা যায় না। কথিত আছে, রাজরাজেশ্বরী কালী পুজোর বয়স প্রায় সাড়ে তিনশো বছর। বংশপরম্পরায় এই পুজো করে আসছেন রাজবাড়ির সদস্যরা। পুজো হয় না বলি। পাঁঠাকে উৎসর্গ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলামের মতো বরেণ্য মানুষেরা এই পুজোয় এসেছেন।


রাজরাজেশ্বরী কালী পুজো শুরু করেছিলেন রাজ রাও রাম শঙ্কর রায়। কথিত আছে, রাজা রাও রাম শঙ্কর রায় একদিন স্বপ্নদেশ পান, লালগোলার কলকলির চরে দেবী রাজরাজেশ্বরী রয়েছেন।দেবী তাঁকে রাজবাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার আদেশ দেন। তারপর রাজা রাও রাম শঙ্কর রায় রাজ পুরোহিতকে তা জানান। তারপর চরে গিয়ে দেবীকে উদ্ধার করে এনে রাজপ্রাসাদের সামনে দালানবাড়ি তৈরি করে প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে শুরু হয় পুজো। যদিও চিরাচরিত কালী মূর্তির চেয়ে লালগোলা রাজরাজেশ্বরী কালি মুর্তি আলাদা। কালী মূর্তির পাশে রয়েছে লক্ষ্মী, সরস্বতী। শিবের ওপর এক পা দিয়ে ও এক পা তুলে নৃত্য রত অবস্থায় রয়েছে কালী। কালীর চার হাতের মধ্যে একটি হাতে আশীর্বাদ ও একটি হাতে খড়্গ থাকে। বাকি দুটো হাত থাকে হাতাতালি দেওয়ার ভঙ্গিমায়। দেবী মালদহের কোনও জায়গায় পূজিতা হতেন। সেখান থেকে নদীর জলে ভেসে চলে আসেন চরে। দেবীকে অন্ন ভোগ দেওয়া হয়। রীতি মেনে ইলিশ মাছের ভোগও দেওয়া হয়। রাজরাজেশ্বরী জাগ্রত দেবী বলেই পরিচিতা ভক্তদের মাঝে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...