History of Pother kali

কালী কথা: মণ্ডলাই গ্রামের পথের কালী

পাণ্ডুয়ার মণ্ডলাই গ্রামে পথের পাশে শুরু হয়েছিল দেবী কালীর পুজো। দেবী কালী এখানে পথের দেবী হিসাবে পূজিতা হন, তাই তাঁর নাম পথের মা বা পথের কালী। জনশ্রুতি আছে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে গ্রামের সমস্ত বিপদ মা মাথায় করে রক্ষা করেন দেবী মা। মায়ের স্থায়ী কোনও মন্দির নেই। বর্তমানে মণ্ডলাই বারোয়ারি পথের কালীমাতা পুজো কমিটি পুজোর পরিচালনা করে। একদা মণ্ডলাই ছিল শ্বাপদ সংকুল, জনমানব শূন্য এলাকা ছিল। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যেত কঙ্ক নদী। কঙ্ক নদীর তীরেই ছিল শ্মশান। সেই শ্মশান ছিল তন্ত্রসাধকদের পীঠস্থান, সাধনক্ষেত্র। সেই শ্মশানেই কোনও এক তন্ত্রসাধকের হাতে শুরু হয়েছিল কালীপুজো।

 

জনশ্রুতি রয়েছে, ওই তান্ত্রিক এক রাতের মধ্যে দীর্ঘাঙ্গি কালীমূর্তি তৈরি করে পুজো করতেন এবং সেই রাতেই বিসর্জন দিতেন। লোক চক্ষুর আড়ালে দেবীর পুজো হত। হঠাৎ এক বছর এক গৃহী লোক তান্ত্রিকের ক্রিয়াকলাপ দেখে ফেলে। তারপরে তার হাতে পুজোর সমস্ত দায়ভার দিয়ে চলে যান তান্ত্রিক। সেই সময় থেকে তিনি পুজো করতেন। কালক্রমে কঙ্ক নদীর পাড়ের শ্মশানে জনবসতি তৈরি হয়েছে। হয়েছে পাকা রাস্তা। সেই রাস্তার ধারেই পুজো হয় পথের মায়ের। মায়ের মাথার উপরে কোনও ছাদ নেই। ফাঁকা জায়গাতেই থাকেন মা কালী। 

 

আরেকটি কাহিনি শোনা যায়। পথের কালী শ্মশানকালী রূপে পূজিত হত। কোনও এক তন্ত্রসাধক এক রাতের মধ্যে প্রতিমা নির্মাণ করে পুজো করেছিলেন। কথিত আছে, পুজোর রাতেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে যান তিনি। সে দৃশ্য এলাকার কোনও এক ব্রাহ্মণ দেখে ফেলেছিলেন। এরপর সেই ব্রাহ্মণের হাতে পুজোর দায়িত্ব তুলে দিয়ে চলে যান তন্ত্রসাধক।

 

পান্ডুয়া মণ্ডলাই গ্রামে ঠিক কবে পুজো শুরু হয়েছিল তা অজানা। মনে করা হয়, আনুমানিক প্রায় ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পথের মা পুজো পাচ্ছেন। দীপান্বিতা অমাবস্যায় সাজিয়ে তোলা হয় মাকে। একশো ভরি সোনা ও পাঁচ থেকে সাত কেজি রুপোর অলংকারে ভূষিত হন দেবী। দেবী হয়ে ওঠেন সালঙ্কারা। দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে পথের মায়ের পুজোয় বহু মানুষের সমাগম হয়। পুজো ধীরে ধীরে জনপ্রিয় বারোয়ারি পুজো হয়ে উঠেছে। পান্ডুয়া মণ্ডলাই গ্রাম-সহ আশপাশের মানুষের কাছে দেবী খুবই জাগ্রত। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা মায়ের কাছে পুজো দিতে আসেন।  

 

প্রত্যেক বছর দীপান্বিতা অমাবস্যায় কার্তিক মাসে এখানে মহা সমারোহে কালীপুজো হয়। বহু মানুষ মানত করেন মায়ের কাছে। মানত পূরণ হলে এসে দণ্ডি কাটেন। মনোবাঞ্ছা পূরণ হলে অনেক ভক্তই মাকে নিজের বুক চিরে রক্ত দেন। প্রথা মেনেই পাঁঠা বলি দেওয়া হয় ফি বছর। পাঁঠা বলির পাশাপাশি ছাঁচি কুমড়ো বলিরও প্রথা রয়েছে এখানে। আখ বলিও দেওয়া হয়। দেবীকে চিনি ও সন্দেশ নৈবেদ্যে দেওয়া হয়। পুজোর পরদিন অন্নকূটে অংশ নেন কয়েক হাজার মানুষ। সেদিনই হয় মায়ের বিসর্জন। স্থানীয় পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...