পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে রয়েছে একাধিক কালী মন্দির। মা কল্যাণেশ্বরীর জেলাকে কালী ক্ষেত্র বলাই যায়। এখানেই রয়েছেন মা পিয়ালা কালী। দুর্গাপুরের বিখ্যাত কালী মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম পিয়ালা কালীবাড়ি। জাতীয় সড়কের একদম পাশেই অবস্থিত এই কালী মন্দির। সাতের দশকে প্রথম তৈরি হয় মন্দির। দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের কাছে অবস্থিত এই পিয়ালা কালী মন্দির বিয়ের জন্য খুবই জনপ্রিয়। এই মন্দিরে অনেকেই আসেন বিয়ে করতে। যারা বাড়ির অমতে বিয়ে করেন, তাদের প্রথম পছন্দ পিয়ালা কালী বাড়ি। মা পিয়ালা কালী গাড়ির চালক ও যাত্রীদের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করনে বলে বিশ্বাস ভক্তদের।
ভক্তদের মতে, পিয়ালা মা অত্যন্ত জাগ্রত, দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এই কালী মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। একদা দুর্গাপুর ছিল শাল মহুয়ায় জঙ্গলে ঘেরা জনপদ। ফি দিন জিটি রোডে দুর্ঘটনা ঘটত। এখন যেখানে মন্দির অবস্থিত, সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় প্রতি রাতেই ট্রাক চালকরা দেখত লাল পাড় সাদা শাড়ী পরা এক মহিলা রাস্তা পারাপার করছেন। চোখের পলকেই তিনি মিলিয়ে যেতেন। ১৯৭২ সাল নাগাদ দুর্গাপুরে প্রথম মিনি বাস চালু হয়। সেই সময় মিনি বাস চালকদের উদ্যোগে এবং জনৈক পঞ্চানন মিশ্রর চেষ্টায় সিটি সেন্টার এলাকায় হাইওয়ের পাশে পিয়ালা মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে মন্দিরে মা পূজিত হন। ধীরে ধীরে দুর্ঘটনাও কমতে থাকে।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, এক দীপান্বিতা কালী পুজোর রাতে মায়ের মূর্তি এনে পুজো করেছিলেন পঞ্চানন মিশ্র। পুজোর পরই দেবীর মূর্তি তাঁরা বিসর্জন দিয়ে দেন। তারপর রাতে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন। বলেন আমায় বিসর্জন দিয়ে দিলি। ওই রাতেই পঞ্চানন মিশ্র ঘটে দেবীর পুজো আরম্ভ করেন। কিছু দিন ঘটে পুজোর পর, মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি আনা হয়। এরপর ১৯৯১ সালে বিধাননগরের এক ভক্ত মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। সেই ভক্তের উদ্যোগে মায়ের মাটির মূর্তির বদলে শিলা মূর্তি স্থাপন করা হয়। শিবের উপর বিরাজ করেন কষ্টি পাথরের কালী। হাতে থাকে খাড়া, অন্য হাতে দেবী বরাভয় মুদ্রায় আশীর্বাদ করেন। মন্দিরের সংস্কার করা হয়। পঞ্চানন মিশ্রের প্রতিষ্ঠা করা এই মন্দির আকার, আয়তনে বৃদ্ধি পেয়েছে। তৈরি হয়েছে বিশ্বকর্মার মন্দির। মিশ্র পরিবারের উত্তরসূরিরা আজও মন্দিরে পৌরহিত্য করেন।
শুধু দুর্গাপুর নয়, দুর্গাপুরের বাইরে থেকেও বহু ভক্ত মন্দির দর্শনে আসেন মনস্কামনা পূরণের জন্য। প্রতি বছরই কালী পুজোর দিনে অমাবস্যা তিথিতে মায়ের বাৎসরিক পুজো হয়। মন্দিরে বিবাহ, উপনয়ণ-সহ বিভিন্ন সামাজিক আচার অনুষ্ঠান হয়। গঙ্গাসাগর মেলার সময় আগত দর্শনার্থীরা মন্দিরে রাত্রিযাপন করেন। একটা সময় জাতীয় সড়কের গা ঘেঁষে মন্দিরটি অবস্থিত ছিল। বর্তমানের নতুন মন্দিরটি জাতীয় সড়ক থেকে কিছুটা দূরে নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরে নিত্যপুজো হয়। সকাল বিকেল দুই বেলা ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। বিশেষ বিশেষ তিথিতে ভক্তদের ভিড় বাড়ে।
দীপান্বিতা অমাবস্যায় বার্ষিক পুজোর পরের দিন অনুষ্ঠিত হয় মায়ের অষ্টমঙ্গলা। সেদিন বিশেষ ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রত্যেক শনি ও মঙ্গলবার এখানে বিপুল ভক্ত সমাগম হয়।