কালী কথা: বাসুদেবপুরের পতিত পাবনী শ্মশানেশ্বরী কালী

আজকে কালী কথায় হাওড়ার বিখ্যাত এক শ্মশান কালীর কথা, হাওড়া জেলার সাঁকরাইলের বাসুদেবপুর গ্রামে রয়েছে পতিত পাবনী শ্মশানেশ্বরী কালী মন্দির। মন্দিরের বয়স একশো বছরের বেশি।
আন্দুল স্টেশনে নেমে বা সড়ক পথে বাসুদেবপুর পাঁচমাথা মোড়ের কাছেই রয়েছে মন্দির।

বাসুদেবপুর গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে গঙ্গা নদী। প্রবাহিত গঙ্গার তীরেই রয়েছে শ্মশান কালীর মন্দির। জানা যায়, শতবর্ষে আগে এই অঞ্চলে ছিল জঙ্গল। অশ্বত্থ, পাকুড়, বটের জঙ্গলে তেমন জনবসতি ছিল না। থাকার মধ্যে কয়েক ঘর কুমোর, তিলি আর জেলেদের বাস ছিল। দিনের বেলাতেও গা ছমছমে পরিবেশ। গঙ্গার ধারের সেই জায়গায় শুরু হল মৃতদেহ সৎকারের কাজ। বাসুদেবপুর গ্রাম এবং আশপাশের বহু গ্রামের কেউ মারা গেলে, সেখানে দাহ করা হত। আস্তে আস্তে গঙ্গা তীরের এলাকা শ্মশানে পরিনত হল। আদ্যাশক্তি মহামায়া কালীর বিচরন ক্ষেত্র হল শ্মশান। তিনি যেমন জীবের সৃষ্টি করেন তেমনই সংহারও করেন। সৃষ্টি আর লয় তাঁর চরণেই আবর্তিত হয়। গ্রামবাসীরা ভাবলেন শ্মশানে কালীর আরাধনা করা দরকার। এই ভাবনা থেকেই তৈরি হল মন্দির। গ্রামের সাধন সাধুখাঁ, গজবালা সাধুখাঁ, অভয় সাধুখাঁ, সুরথমোহন পাল, চারুচন্দ্র পাল, শৈলী পরামানিক, ভৈরব আড়ং, কালো মালিক, আশুতোষ মোদক, তারাবালা রায়, শরৎ কয়াল, নিমাই হালদারদের উদ্যোগে গড়ে উঠল মন্দির। সময়টা বাংলার ১৩৩০ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৯২৩ সাল। বিগত বছর মন্দির শতবর্ষ ছুঁয়েছে।

একদা মন্দির বলতে ছিল কড়ি বর্গার ছাদ দেওয়া পাকা একটা ঘর মাত্র। চারিদিকে টিনের চাল দিয়ে তৈরি বারান্দা। শ্মশানেশ্বরী মায়ের মন্দিরে তদানিন্তন সময়ে কোনও ভৈরবের মন্দির ছিল না। বাংলার ১৩৩৭ সনে অর্থাৎ ১৯৩০ সালে মায়ের মন্দিরের পাশেই আটচালার ভূতনাথেশ্বর শিব মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজগঞ্জ গ্রামের জনৈক ভূতনাথ রায় কয়াল শিব মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দির প্রাঙ্গণে দক্ষিণ দিকে পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শনিদেবের মন্দির।

মন্দিরের পিছনে রয়েছে বাঁধানো ঘাট। উত্তর দিকে পঞ্চমুণ্ডির আসন এবং মা তারার মন্দির। প্রাচীন বকুল গাছ, অক্ষয় বকুল মন্দিরের প্রাচীন সময়ের সাক্ষী। মন্দিরটি সংস্কার করা হয় ১৯৭১ সালে। তখনই মন্দির আজকের রূপ পায়।

এই মন্দিরের দেবী কালিকা শ্মশানের অধিষ্ঠিতা। শ্মশানে অধিষ্ঠাত্রী হলেও দেবী কিন্তু শ্মশান কালী নন, তিনি দক্ষিণাকালী বা ভদ্র কালী। দেবীর পদতলে বিরাজ করেন দেবাদিদেব মহাদেব। দেবীর ডান পা রয়েছে মহাকাল মহাদেবের বুকে। দিগম্বরী দেবীর বাম দিকে এক হাতে নরমুণ্ড, অপর হাতে খড়্গ। দক্ষিণে এক হাতে অভয় অর্থাৎ বরাভয় মুদ্রা অপর হাতে বর অর্থাৎ আশীর্বাদ মুদ্রা। মন্দিরে নিত্যপুজো হয়। ভোরে আর সন্ধ্যায়, দিনে দু'বার মঙ্গলারতি হয়। মাকে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগে থাকে খিচুড়ি, পায়েস, নানারকম সবজি ভাজা, লাবড়া বিভিন্ন প্রকার ফল ও মিষ্টি। এই মন্দিরে বলিদানের প্রথা নেই। দেবীকে আমিষ ভোগ দেওয়ার প্রচলনও নেই।

প্রতি অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষ পুজো হয়। কার্তিক মাসে দীপান্বিতা কালী পুজোর সময় তিন দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস দেবী খুবই জাগ্রতা। দূরদুরান্ত থেকে নিত্যদিন ভক্ত সমাগম হয় মন্দিরে। ভক্তরা বলেন দেবী পতিত পাবনী এবং করুণাময়ী।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...