দমদমে রয়েছে মা নিশা কালীর মন্দির। এই কালী মন্দির বাংলার এক ব্যতিক্রমী কালী মন্দির। দেবী মূর্তি ব্যতিক্রমী ও বিরল। বিষ্ণুর নাভিপদ্ম থেকে ব্রহ্মার উত্পত্তি, একই সময় বিষ্ণুর কর্ণকমল থেকে দুটি দৈত্যের জন্ম হয়। দুই দৈত্যের নাম ছিল মধু ও কৈটভ। মধু ও কৈটভ ব্রহ্মাকে আক্রমণ করতে উদ্যত হলে ব্রহ্মা মহাকালীর স্তব শুরু করেন। আদ্যাশক্তি মহামায়া থেকে কালীর আবির্ভাব হয়।
শ্রী শ্রী চণ্ডী অনুযায়ী, শুম্ভ ও নিশুম্ভ; দৈত্যদ্বয়ের অত্যাচারে দেবতারা ভয়ে ভীত হয়ে নিজেদের বাঁচাতে জগতকে বাঁচাতে আদ্যাশক্তির আরাধনা করেন। আদ্যাশক্তির দেহকোষ থেকে আবির্ভূতা হন অম্বিকা। তিনি কৃষ্ণবর্ণ হওয়ায় তার অপর নাম কালী।
কালীর বিভিন্ন রূপ রয়েছে। কোথাও তিনি ভদ্রকালী, কোথাও আবার রক্ষাকালী, কোথাও শ্মশানকালী, আবার কোথাও তিনি শকুন্তলা কালী। আবার তিনি ক্ষ্যাপা কালী, নিশি কালী, ডাকাত কালী, সিদ্ধেশ্বরী কালী, করুণাময়ী কালী। নিশি কালীই হলেন নিশা কালী। পণ্ডিত ভগবতীচরণ কাব্যভূষণ রচিত রক্ষাকালিকার্চচন কৌমুদিদে দেবী নিশা কালীর অষ্টভূজা ও পঞ্চাননা স্বরূপের ধ্যানমন্ত্র রয়েছে। দমদমের কুণ্ডু বাগানে রায় মল্লিক কলোনিতে বিরাজ করেন মা নিশা কালী। দেবীর প্রতিমায় পাঁচটি মুখমণ্ডল দেখা যায়। তাই দেবীর নাম পাঁচমাথা কালী। দেবীর পদতলে শিবের সঙ্গে সঙ্গে বাঘও থাকে।
নিশা কালী হলেন দেবী কালিকার এক বিশেষ রূপ। তিনি বিপদ থেকে রক্ষা করেন। সংকটমোচন করেন। মা নিশা কালী আদপে মৎসজীবী জেলেদের দেবী। জেলেরা তাঁর আরাধনা করেন। দুর্যোগের রাতে জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে দেবীর আরাধনা করে রওনা হতেন। দেবীর পুজোর ফুল যে নৌকায় থাকত, হাজার বিপদ, দুর্যোগেও সেই নৌকা কখনও ডুবে যেত না। ভূত, প্রেত ভূতের ভয় থেকেও রক্ষা করেন দেবী। নিশা কালীর পুজোর প্রথা বিলীন হয়ে গেলেও কিছু কিছু জায়গায় দেবীর পুজো হয়। তেমনই দেবীর মন্দির রয়ে গিয়েছেন দক্ষিণ দমদমে। সেখানে আজও দেবী পুজো পান।
দেবী অষ্টভূজা ও পঞ্চাননা। দেবীর বাম পা মহাদেবের উপর ও ডান পা ব্যাঘ্রের উপর অবস্থান করে। দেবীর দুই পাশে দুই সহচরী বিদ্যমান। দেবীর গাত্রবর্ণ নীল। দেবীর আট থাকে শক্তি, শূল, ধনু, বাণ, খড়্গ, খেটক এবং বাকি দুই হাতে বরমুদ্রা এবং অভয়মুদ্রা। গলায় মুণ্ড মালা। নিশা কালী মন্দিরে দেবী নিত্য পুজো পান। কালীপুজো ও অমাবস্যায় বিশেষ পুজো হয়। কার্তিক মাসেই দেবীর বাৎসরিক পুজো অনুষ্ঠিত হয়।