কালী কথা: নীলকন্ঠেশ্বরী কালী মন্দির

হুগলি জেলার অন্যতম প্রাচীন জনপদ হল ফরাসডাঙা অর্থাৎ চন্দননগর। সেখানে বিরাজ করেন মা নীলকন্ঠেশ্বরী। কালী মন্দিরটি চন্দননগরের গোন্দলপাড়ায় রবীন্দ্রনাথ রোডে অবস্থিত। মন্দিরের বয়স একশো পেরিয়েছে। শিবনাথ মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী শরৎকুমারী দেবী এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ১৯১৩ সালের ১০ জুলাই। দিনটি ছিল শুক্ল পক্ষের সপ্তমী। বাংলার ১৩২০ বঙ্গাব্দের ২৬ আষাঢ়। অর্থাৎ মন্দিরের বয়স এখন একশো বারো বছর।

মুখোপাধ্যায় দম্পতি ছিলেন নিঃসন্তান। সন্তান কামনায় বিভিন্ন মন্দিরে মানত করতে তাঁরা। জনশ্রুতি রয়েছে, এক গভীর রাতে দেবী কালী তাঁদের স্বপ্নে আসেন।নীলকণ্ঠেশ্বরী মা কালী তাঁদের স্বপ্নে এসে আদেশ দেন, বাগানের পশ্চিম কোণে শ্বেতচাঁপাফুল গাছের নীচে থেকে কষ্টিপাথর উদ্ধার করে, সেই পাথরে দেবীমূর্তি গড়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা কর। স্বপ্নাদেশ অনুসারে, শিবনাথ এবং শরৎকুমারী সেই কষ্টিপাথর উদ্ধার করেন। তারপর ভাস্করকে দিয়ে অপূর্ব সুন্দর কালী মূর্তি তৈরি গড়ান। দেবীর মুখশ্রী এক কিশোরীর মতো। শিবনাথ এবং শরৎকুমারী, মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দির নির্মাণে সময় লেগেছিল প্রায় তিন থেকে চার বছর। তৎকালীন সময়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছিল মন্দির তৈরিতে। এই কালীকে নিজেদের কন্যা হিসাবেই পুজো করতেন মুখোপাধ্যায় দম্পতি।

মন্দির প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পরে শরৎকুমারীর হঠাৎ মৃত্যু হলে ভাগিনেয় অনাদিনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রকাশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে মন্দিরের দ্বায়িত্ব বর্তায়। প্রকাশচন্দ্র মন্দির সংস্কার করেন। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর মামাতো ভাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য একসময় মন্দিরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফের অনাদিনাথের কনিষ্ঠপুত্র বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর মন্দিরের দ্বায়িত্ব এসে পড়ে। তিনি এবং প্রকাশচন্দ্রের পুত্র অক্ষয় কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় মন্দিরের দেখভাল করছেন।

মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীও বিস্ময়কর। মন্দিরের অদূরেই রয়েছে গঙ্গা। পঞ্চরত্নশৈলীতে নির্মিত মন্দির। মন্দিরটি দক্ষিণমুখী। নীলকণ্ঠেশ্বরী কালীমন্দির একটু উঁচু ভিত্তিবেদির উপরে প্রতিষ্ঠিত। গর্ভগৃহের ছাদের নিচের দিকটি গম্বুজাকৃতি। উপরের কক্ষের দু'পাশে দুটি চালা মন্দির রয়েছে। গর্ভগৃহে পাথরের বেদীর উপরে স্থাপিত সিংহাসনে শব রূপী শিবের বক্ষে দন্ডায়মান দেবী নীলকণ্ঠেশ্বরী। মাতৃমূর্তি কষ্টিপাথর নির্মিত। চতুর্ভূজা কালী মূর্তি। গর্ভগৃহের বামদিকের ঘরে আছেন কষ্টিপাথরের বাণেশ্বর শিব।

নীলকণ্ঠেশ্বরী কালীর নিত্যপুজো হয়। এছাড়াও কার্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় মহাধুমধাম করে কালী পুজো উদযাপিত হয়। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্ল সপ্তমী তিথিতে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে পুজো হয় মহাজাঁকজমকপূর্ণ ভাবে। এটাই মন্দিরের প্রধান বার্ষিক উৎসব। মন্দিরে সারা বছর ভক্ত সমাগম হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...