ভোলা ময়রার রূপবতী কন্যা ‘নিখুঁতি’ কীভাবে হয়ে উঠল শান্তিপুরের গর্ব

অনেকে বলে ‘খুদে ল্যাংচা’, কেউ ‘বাচ্চা পান্তুয়া’, কারও কাছে ‘ছোট কালোজাম’ কারও কাছে ‘নিকুতি’। ছোট্ট ছোট্ট কালচে লাল রঙের গোলাকার এই মিষ্টির আসল নাম ‘নিখুঁতি’। পান্তুয়া গোত্রের নিখুঁতি তার স্বতন্ত্র স্বাদে মন কেড়েছে মিষ্টি প্রেমিকদের।

নামজামা মিষ্টির ভিড়ে খানিকটা দলছুটও হলেও ঐতিহ্যে প্রাচীন। নদীয়ার শান্তিপুরের সিগনেচার নিখুঁতি। ইংরেজ বড়লাট থেকে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কে না ভালবাসতেন!

নদীয়ার লোকগবেষকদের মতে, নিখুঁতির জন্ম আনুমানিক দুশো বছর আগে। শান্তিপুরের গোভাগাড় মোড়ের কাছে ছিল ইন্দ্র ময়রার মিষ্টির দোকান। ভাল নাম ভোলা ময়রা। ভোলা ময়রা তাঁর মেয়ের নাম রেখেছিলেন নিখুঁতি। কন্যার নিখুঁত রূপের কারণেই সম্ভবত পিতার এমন নামকরণ। কন্যা প্রায়ই গিয়ে বসত বাবার মিষ্টির দোকানে।

nikuti-

এক দিন সে খেলার ছলে ছানার লম্বা দলা পাকিয়ে ফুটন্ত তেলে ফেলে দেয়। এদিকে বাবা আসছে দেখে লাল হয়ে আসা সেই গোলা তুলে চিনির রসে ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালায়। মেয়ের কান্ড মোটেই পছন্দ হয়নি তাঁর।

কিন্তু তিনি ব্যবসায়ী মানুষ। দোকানে সেদিন মিষ্টি ফুরিয়ে আসতে মেয়ের দুষ্টুমির ফসল সেই ছানার গোলাই দিয়ে দেন খরিদ্দারকে।

পরের দিন সেই খরিদ্দার ফের দোকানে আসেন। খোঁজ করেন আগের দিনের মিষ্টিটির। বেজায় ভাল লেগেছে তাঁর নতুন মিষ্টির স্বাদ। মিষ্টির নাম জানতে চান তিনি।

কানে কম শুনতেন ভোলা ময়রা। তিনি ভাবেন, মিষ্টি যে তৈরি করেছে, তার নাম জানতে চাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন ‘নিখুঁতি’। নাম জেনে নিয়ে খরিদ্দার ওই মিষ্টিই ফের বানাতে বলেন। কালক্রমে ‘নিখুঁতি’ নামেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই মিষ্টি।

কীভাবে তৈরি হয় নিখুঁতি?

শান্তিপুরের ভিয়েনে ছানার লেচি ভেজে ফেলা হয় রসে। স্বাদ আর গন্ধ বাড়াতে দেওয়া হয় গোলমরিচ ও এলাচ। শান্তিপুরের বিভিন্ন দোকানে তৈরি নিখুঁতিতে গোলমরিচের উপস্থিতি অবশ্যম্ভাবী। বাইরেটা কঠিন, ভিতরটা নরম। আকারে ল্যাংচার চেয়ে ছোট, অনেকটা আঙুলের মত দেখতে এই নিখুঁতিই দুই শতাব্দী ধরে ভোজনরসিকদের তৃপ্ত করে আসছে।

ভোলা ময়রার সেই দোকান এখন আর নেই। তবে তাঁর দোকানে তৈরি নিখুঁতি আজও শান্তিপুরের গর্ব।  

nikuti-1

শান্তিপুর ছাড়াও বাংলার অন্যান্য জেলাতেও মেলে এই মিষ্টি। তবে আঙ্গুলের মতো লম্বা নিখুঁতি শান্তিনিকেতানের নিজস্ব। আবার ছোট্ট ডিম্বাকৃতি নিকুতিও জনপ্রিয়। তাতে অবশ্য শুধুই এলাচের গন্ধ মেলে। সীতাভোগের সঙ্গে যেমন থাকতেই হবে এই ডিমের আকারে নিকুতি।  

তবে খাঁটি নিখুঁতির স্বাদ পেতে আসতেই হবে শান্তিপুর।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...