কালী কথা: মৌতড় কালীবাড়ি, পঞ্চমুণ্ডির আসনে বিরাজ করেন দেবী কালিকা

আজ কালী কথায় পুরুলিয়ার এক কালী মন্দিরের কথা, মন্দিরটির নাম মৌতড় কালী মন্দির। এখানকার কালীপুজো 'মা বড় কালী পুজো' হিসেবে খ্যাত। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ২ নম্বর ব্লকে অবস্থিত মৌতড় কালী মন্দিরটি শতাব্দী প্রাচীন। কথিত আছে, প্রায় আড়াইশো বছর আগে এখানে দেবী কালিকার আরাধনা শুরু হয়েছিল। পুরুলিয়া জেলার অন্যতম বিখ্যাত ও বড় পুজো হিসেবে পরিচিত মৌতড় কালীবাড়ি। গোটা বাংলার মানুষ তো আসেনই, পাশাপাশি ঝাড়খণ্ড থেকেও পুজো দেখতে আসেন বহু ভক্ত। বছর দশ-বারো আগে মন্দিরটি নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। ২০১১ সালে স্থানীয় প্রশাসন, মৌতড় ষোলো আনা উৎসব কমিটি ও গ্রামের তরুণ সংঘের মিলিত উদ্যোগে নবরূপে মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে।

251a7a6e-f2b9-4f72-b208-3fefd53002e7

মন্দিরে নিত্য পুজো হয়। পাশাপাশি মহাসমারোহে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজো হয়। অমাবস্যার রাত থেকে শুরু হয়ে পরদিন সকাল পর্যন্ত চলে পুজোপাঠ। পুজো উপলক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী মেলা বসে। এই মন্দিরের অন্যতম বিশেষত্ব হল বলিদান। প্রতি বছর কালী পুজোয় কয়েকশো পশু বলি দেওয়া হয়। গোটা রাত ধরে বলিদান চলে, কখনও কখনও তা পরদিন দুপুর অবধিও চলে। কয়েক হাজার ছাগল বলি দেওয়া হয়। ভেড়া ও শতাধিক মোষ বলি হয় এখানে। কথিত আছে, বলির সময় কালী মূর্তিকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। কারণ বলিদানের সময় কালী মূর্তি নাকি প্রচণ্ড ভাবে নড়ে। দেবী কালিকা চতুর্ভূজা, হাতে খাড়া ও নরমুণ্ড রয়েছে তাঁর। অন্য দুই হাতে তিনি আশীর্বাদ ও বরাভয়দাত্রী। দেবীর পদতলে সাদা শিব বিরাজ করেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, মৌতড় গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, সাধক শোভারাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। শোভারাম ছিলেন বর্ধমানের বাসিন্দা। সাক্ষাৎ কালী সাধক। বিয়ের পর আর তিনি বর্ধমান ফেরেননি, মৌতড়েই থেকে গিয়েছিলেন। শ্মশানে, জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। আজ যেখানে মন্দির দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেখানেই পঞ্চমুণ্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে কালী আরাধনা শুরু করেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর এলাকাবাসী সেই পঞ্চমুণ্ডির আসনের উপরে স্থায়ী কালী মন্দির নির্মাণ করেন এবং কালী পুজো শুরু করেন। বংশানুক্রমে বন্দ্যোপাধ্যায়রাই এই মন্দিরের পুরোহিত। আগে মাটির কালী মূর্তি বানিয়ে পুজো করা হত। পুজোর পরের দিন বিসর্জন দেওয়া হত। ২০১৯/২০ নাগাদ জৈষ্ঠ মাসে মন্দিরে দেবী কালিকার শিলা মূর্তি স্থাপন করা হয়। সেই কৃষ্ণবর্ণের মূর্তিই আজ পূজিতা হচ্ছেন।

ভক্তদের বিশ্বাস, এই মন্দিরে মানত করলে তা পূরণ হবেই। ধানবাদ, ঝরিয়া, রাঁচি, টাটাসহ ওড়িশা, অসম, বিহার থেকেও বহু মানুষ তাঁদের মানত পূরণের উদ্দেশ্যে এখানে আসেন। মানত পূরণ হলে পশু বলি দেন। দুর্গাপুজোর অষ্টমী বাদে বছরের প্রতিদিনই এখানে ছাগ বলি হয়। কালীপুজোর রাতের পশু বলি দেওয়া দেখতে তো রীতিমতো ভিড় জমে। বলির রক্তে কার্যত পুকুর তৈরি হয়ে যায়।

মৌতড়ের মা বড় কালীর পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় বিজয়া দশমীর পরদিন থেকে। মন্দিরে রয়েছে শতাধিক বছরের পুরনো পুঁথি। সেই পুথি অনুযায়ী পুজো হয়। পুজোর সময়ে সেই পুঁথি পাঠ করা হয়। ভক্তদের ভিড়ে উপচে পড়ে মন্দির চত্বর।

  • ট্যাগ

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...