কালী কথা: মদারাট রক্ষা কালী মন্দির

বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণার এই জনপদে রয়েছে অসংখ্যক কালী মন্দির। তাদের মধ্যে অন্যতম মদারাট রক্ষা কালী মন্দির। দেবীর মন্দিরের নামেই এলাকার নাম হয়ে গিয়েছে মদারাট কালীতলা। বারুইপুর স্টেশনে নেমে, চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে অটো ধরে সহজেই মন্দিরে পৌঁছে যাওয়া যাবে।

প্রতি চৈত্রে দেবীর বাৎসরিক পুজো হয়। হাজারে হাজারে ভক্তরা ভিড় জমান সে সময়ে। প্রায় আড়াই হাজার হাঁড়ি ভোগ রেঁধে বিতরণ করা ভক্তদের মধ্যে। ভক্তদের বিশ্বাস, বিপদে-আপদে দেবী তাঁদের রক্ষা করেন। তাই তো দেবী রক্ষা কালী। দেবী রক্ষা কালী কৃষ্ণবর্ণা। কিন্তু তিনি লোলজিহ্বা নন। সাধারণত রক্ষা কালী দ্বিভুজা হন। অর্থাৎ দেবীর হাতের সংখ্যা দুটি। দেবীর এই বিশেষ রূপের পুজো হয় মূলত বৈশাখ মাসের শেষের দিকে। গ্রামে গ্রামে দেবীর বাৎসরিক পুজোর চলও রয়েছে। তবে মদারাটের দেবী কিন্তু চতুর্ভুজা।

কালী দুষ্টের দমনকারী। রক্ষা কালী আপদ বালাই থেকে রক্ষা করেন। তাঁর পুজোর ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম মানা প্রয়োজন। শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ-ই কেবল দেবীর পুজোর পৌরহিত্য করতে পারেন।

মদারাট রক্ষা কালী মন্দিরের বয়স দেড়'শো বছর। জনশ্রুতি অনুযায়ী, স্থানীয় এক বৃদ্ধা দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু করেছিলেন। তারপর থেকে প্রতিবছর এক নির্দিষ্ট সময়ে মদারাটে নিয়ম করে দেবী রক্ষা কালী পূজিতা হয়ে চলেছেন। দেবী এই মন্দিরে মনোবাঞ্ছার কৃপা কল্পতরু। শোনা যায়, জাগ্রত দেবীর কৃপায় অগণিত ভক্তের মনস্কামনা পূরণ হয়েছে। মনোবাঞ্ছা পূরণ হলে ভক্তরা পুজো দেন। পুজোয় কেউ দণ্ডি কাটেন, কেউ বুক চিরে রক্ত দেন দেবীর উদ্দেশ্যে, কেউ আবার দেবীকে চুল দান করেন। বলিদান হয়। শাড়ি ও সোনার অলংকার দান করেন ভক্তরা। ভক্তদের বিশ্বাস, নিঃসন্তান দম্পতি দেবীর পুজোর যজ্ঞের কলা খেলে, তাঁদের সন্তানলাভ হয়। দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তি মেলে। বেকারদের কর্মসংস্থান হয়। অবিবাহিতদের বিবাহ হয়।

এখন যেখানে দেবীর মন্দির রয়েছে, একদা সেখানেই ছিল তেঁতুল গাছ। গাছের নীচে খোলা জায়গায় পুজো শুরু হয়েছিল। ভক্তদের চেষ্টায় গড়ে উঠেছে মন্দির। পুরনো মন্দিরের বদলে ১৯৯৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠা হয় বর্তমান মন্দিরের।

মন্দিরে পুজোর ক্ষেত্রে বিশেষ রীতি দেখা যায়। পুজোর দিন সন্ধেবেলায় ঠাকুরের চক্ষুদান করা হয়। সোনার গয়না পরিয়ে দেবীকে শোভাযাত্রা করে মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। রাত থাকতেই মন্দিরের দরজা বন্ধ করে, গয়না খুলে নিয়ে সূর্য ওঠার আগে হয় প্রতিমা নিরঞ্জন। পুজোর দিন এলাকার প্রতিটি বাড়িতে নিরামিষ রান্না করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা পুজো উপলক্ষ্যে উপোস করেন। পুজোর দিন এলাকার আমিষ খাবারের দোকানপাটও বন্ধ থাকে। পুজো ঘিরে কয়েক দিনব্যাপী উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...