কড়কড়ে ভাজা আবার আড়াই প্যাঁচের পাকে পাকে টুপটুপ করছে রস। জিলিপি নামে তাকে চেনে সারা দেশ। কিন্তু জিলিপি তার সাম্রাজ্য গোটা বিশ্ব জুড়ে। তার ইতিহাস প্রায় ৬০০ বছরের প্রাচীন।
এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে সবচেয়ে জনপ্রিয় মিষ্টি জিলিপি।
zলবিয়া, জ্যালেবি, জুলাবিয়া, জুলুবিয়া হাজার এক নাম আড়াই প্যাঁচের এই মিষ্টির। ত্রয়োদশ শতকের রান্নার বই ‘কিতাব আল তাবিখ’ - এ উল্লেখ রয়েছে এই মিষ্টির ।
রমজান মাসে জুলুবিয়া বিতরন করা হয় লেবাননে। তবে তার আকার অবশ্য চেনাজানা প্যাঁচানো গোল নয়। আঙুলের মতো লম্বা।
ইসলাম দেশগুলোতে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ পদ ‘জ্যালেবি’। গ্রীস, তুরস্ক, সিপ্রাসেও মিষ্টির দোকান আলো করে থাকে সে। জৈন সাধক জীনাসুরের লেখা ‘প্রিয়ঙ্কর্ণপাককথায়’ জিলিপি নামক মিষ্টি পদের কথা পাওয়া গিয়েছে। গ্রন্থটি ১৪৫০ শতকে লেখা।
ভিন্ন ভিন্ন দেশে, ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ মিশেছে জিলিপির উপাদানে। পশ্চিম এশিয়ায় ময়দা দিয়ে তৈরি হত। আবার সেই ‘জিলাবিয়া’ মুঘল, পাঠান, শক, হুন দের হেঁশেল হয়ে যেই ভারতে প্রবেশ করল অমনি তাতে মিলল অড়হর ডাল। সঙ্গে চালের গুঁড়ো আর বেসন। ভারতেই কোনও কোনও প্রান্তে জিলিপিতে সুজি এবং বেকিং পাউডারও থাকে। ভারত, বাংলাদেশের এমন কোনও অঞ্চল নেই যেখানে জিলিপি পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের জিলিপি ছানা আর খোয়া ক্ষীর দিয়েও তৈরি করা হয়।
আফগানিস্তানের ঠাণ্ডার মরসুমে মাছের সঙ্গে খেতে দেওয়া হয় জিলিপি।
অড়হড় এবং কড়াইয়ের ডাল, চালগুঁড়ো, ময়দা, একসঙ্গে মিশিয়ে একটা পাতলা মিশ্রণ তৈরি করা হয়। কখনও তার সঙ্গে চিনি কখনও বা গুড় মেশান হয় মিষ্টি স্বাদ আনার জন্য। তারপর গরম তেলে ছাড়া হয় প্যাঁচের আকারে। লাল করে ভাজা জিলিপি তেল থেকে তুলে রসে ফেলা হয়। বেশ কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখার পর পরিবেশন করা হয় খাবার জন্য।
রথ, দোল, টুসু পরব, ভাদু পরবে জিলিপি মাস্ট। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় ভাদু পরবে জিলিপি উৎসব হয়। বিশালাকার জিলিপি নিবেদন করা হয় ভাদু অর্থাৎ ভদ্রাবতীকে। বাংলাদেশে বড় আকারের জিলিপিকে বলা হয় শাহী জিলিপি।
তবে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে জিলিপির কারিগররা। চেনা জিলিপির রং-ও বদলাচ্ছে। জিলিপিতে মিশছে নকল রং এবং গন্ধ। রূপের খানিক অদলবদল ঘটলেও জিলিপি প্রেমিদের তাতে অবশ্য বিশেষ কিছু আসে যায় না। মনের মতো স্বাদ তারা ঠিক খুঁজে নেয়।