'খালোড় কালিবাড়ি'। বাগনানের জনপ্রিয় কালীমন্দির। বর্তমানে হাওড়া জেলার অন্তর্গত হলেও অতীতে বর্ধমানের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
১৭২২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সুবাদার মুর্শিদকুলী খাঁর আমলে ভূমি রাজস্ব বিধি সংশোধনের ফলে প্রায় সমগ্র হাওড়াকে বধর্মান জমিদারীভুক্ত করা হয়। ফলে বাগনান মোগল আমলের বিখ্যাত জমিদার বর্ধমানের মহারাজা কন্দর্প নারায়ণের জমিদারীর অধীনে চলে যায়।
হাওড়া থেকে ৪৩ কিলোমিটার ও কলকাতা থেকে ৪৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত খালোড় গ্রাম। চন্দ্রভাগ, বাঁটুল, বিদ্যানাথপুর, ব্যাঙ্গালুরুর, চন্ডীপুর খালোড়ের কাছাকাছি গ্রাম। 'আইন-ই-আকবরি' অনুযায়ী 'খালড়' পরগণার অধীন ছিল আজকের 'খালোড়' গ্রাম।
মহারাজা কন্দর্প নারায়ণ একদিন দক্ষিণা কালীর স্বপ্ন দেখেন।
স্বপ্নে দেবী তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠা
করার আদেশ দেন।
দেবীর আদেশ পালন করতে দামোদর নদের তটে আট ফুট উচ্চতার দক্ষিণা কালীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
দামোদর নদ বর্তমানে গতিপথ পরিবর্তন করতেন করলেও সেই সময় এই নদ গ্রামের পাশ দিয়েই প্রবাহিত হত।
মন্দিরটি ইট দিয়ে তৈরি। মন্দিরের গাত্রে রয়েছে পালযুগের কষ্টি পাথরের বিষ্ণু মূর্তি ও ছয়টি পাথরের কূর্ম মূর্তি।
মন্দিরের সামনে নাটমন্ডপ। মন্ডপের দু'পাশে দু'টো আটচালা শিব মন্দির।
পূর্ব দিকের মন্দিরে রয়েছে বাণলিঙ্গ। পশ্চিম দিকের মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত আছে মৃত্যুঞ্জয় শিব। প্রথমদিকে মন্দিরে ছাদ ছিল না। ১৩৮৬ সালে ছাদ তৈরি করা হয়।
মন্দিরের অন্দরে দেবী দক্ষিণা কালীর অধিষ্ঠান। তাঁর নিচে শয়নরত অবস্থায় দেবাদিদেব মহাদেব।
শিবের মূর্তিটি নিম কাঠের তৈরি। শোনা যায়, পুরনো কাঠের মূর্তি নষ্ট হয়ে গেলে ১২১৫ সনে নতুন করে কাঠের মূর্তি তৈরি করা হয়। এইবারেও কাঠের মূর্তি নষ্ট হয়ে যায়। শ্যামপুরের দারুশিল্পী গণেশ চন্দ্র মণ্ডল একটিমাত্র নিম কাঠ কেটে বর্তমান মূর্তিটি তৈরি করেন।
১৩৪৭ সনে ৩২ আষাঢ় এই মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ভাদ্র ও পৌষ মাসে দেবীর পূজা হয় এবং মুলোকালীর মেলা বসে। মহানগরীর থেকে অনতি দূরে অবস্থিত এই মন্দিরটি আপনারা ঘুরে আসতে পারেন।
সঙ্গে গ্রামের মেলার আনন্দও উপভোগ করতে পারবেন।