মল্লিক ফটক, ফাঁসিতলা, পিলখানা হাওড়া শহরের অতি পরিচিত কয়েকটি জায়গার নাম। হাওড়া শহরে ঢুকতে গেলে অঞ্চল দিয়েই ঢুকতে হবে আপনাকে।
জিটি রোড ও নেতাজি সুভাষ রোডের মাঝে রয়েছে মল্লিক ফটক। ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দে আন্দুল থেকে মল্লিকরা এই অঞ্চলে এসে বসতি গড়ে তোলে।
দশ আনার বিনিময়ে রামকৃষ্ণপুরে জমিদারির এলাকাভুক্ত কিছু সম্পত্তি কিনে বসবাস শুরু করে। ফটকটি এই বংশের কোন এক ব্যক্তি তৈরি করেন। সেই থেকে এই জায়গার নামও মল্লিকদের ফটক অনুযায়ী মল্লিক ফটক নামে পরিচিত হয়ে যায়। ১
৮৪৮ সালে কলকাতার মতিলাল শীলের নিকট মল্লিকের সম্পত্তি বাঁধা পড়ে। তবে জায়গার নামে আজও তাঁদের স্মৃতি বহন করে চলেছে।
গ্র্যাণ্ড ট্র্যাক রোড ধরে হাওড়া ময়দান পার হয়ে 'শালকে'র দিকে পা বাড়ালেন, এখন যেখানে রেললাইন রয়েছে নবাবী আমলে সে জায়গার কিছু উত্তরে ছিল নবাবের একটি সৈন্য ব্যারাক। কাছাকাছি ছিল চাঁদমারী। এখান থেকে কিছুটা গিয়ে চার্চরোড এবং জিটি রোডের সংযোগস্থলে একটি গাছের তলায় অপরাধীদের ফাঁসি দেওয়া হত। সেই থেকে লোকমুখে জায়গাটির নাম হয়ে যায় ফাঁসিতলা। এই নাম আজও বর্তমান। চাঁদমারীর দক্ষিণে এবং ফাঁসিতলার উত্তরে জায়গাটির নাম "পিলখানা"।
পিলখানা নবাবের হাতি রাখার স্থান ছিল। হাতিশালা আজ হাওড়ার এক ব্যস্ত বহুল অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। সালকিয়া যাওয়ার অন্যতম জায়গা।
শেওড়াফুলির জমিদার বংশের এক শরিক হাওড়া শহরের জমিদারির দশ আনা অংশ কিনে বালিতে বসবাস করতে শুরু করেন। এই বংশের এক কর্তা হলেন হরিশ্চন্দ্র রায়। তিনি হলেন শূদ্রমণি মনোহর রায়ের বংশধর। মনোহর রায় ছিলেন কাটোয়ার কাছে পাটুলি নামে একটি জায়গার জমিদার। একজন ব্রাহ্মণ ভূস্বামীর বকেয়া খাজনা তিনি নবাবের কাছে জমা দেন। নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ এতে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে 'শূদ্রমণি' উপাধি দেন। ছ' আনার জমিদার ছিলেন কালী প্রসাদ রায়। পরবর্তীকালে শোভাবাজারের রাধাকান্ত দেব দশ আনা জমিদারির মালিক হন। বাকি ছ' আনা জমিদারির সালকিয়া অংশটি মাহিয়াড়ীর কুণ্ডুরা মালিকাধীন হয়।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে দক্ষিণ ব্যাঁটরার চক্রবর্তী বংশের নরসিংহদেব ইছাপুর ও আরও তিনটি গ্রামের মালিক হন। বার্ষিক খাজনা একটাকার বিনিময়ে এই অঞ্চলের তাঁর অধীনে আসে। আর সাঁতরাগাছি ছিল মূলত বারেন্দ্র ব্রাহ্মণদের বাস। নবাবী আমল থেকে ক্রমান্বয়ে এইভাবে হাওড়া অঞ্চলটি বিভিন্ন জমিদারিতে অংশ ছিল।