কালী কথা: হংসগেড়িয়া মহাশ্মশানের মা কালী

আজকের কালী কথায় এক শ্মশান কালীর কথা, দেবী বিরাজ করছেন বৃহত্তর সুন্দরবনে। মন্দিরের আশেপাশে আজও হেতাল আর গরাণ গাছের জঙ্গলের দেখা মেলে। একদা গঙ্গার দুই তীরেই ছিল গভীর জঙ্গল। জঙ্গলে ছিল বন্য হিংস্র জন্তুর রাজত্ব। গঙ্গা ও হেতাল গাছের জঙ্গলের ধারেই ছিল হংসগেড়িয়া মহাশ্মশান। জঙ্গলে ঘেরা হংসগেড়িয়া মহাশ্মশানে মা কালীর সাধনা করতেন এক সাধক। কথিত আছে, কৈলাস পণ্ডিত নামে এক তান্ত্রিক জঙ্গলের মধ্যে ২ ফুট উচ্চতার পাথরের কালী মূর্তি পেয়ে পুজো শুরু করেন। তখন থেকে অদ্যাবধি চলে আসছে হংসবেড়িয়া মহাশ্মশানের কালী আরাধনা।

দক্ষিণ ২৪ পরগণার মগরাহাটের গোখুণ্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতে মধ্যে পড়ে হংসগেড়িয়া গ্রাম। জনশ্রুতি অনুযায়ী, দক্ষিণ সুন্দরবনের এই জঙ্গলাকীর্ণ গ্রামে আদিগঙ্গার তীরে বটগাছের কোঠরে বাস করতেন পণ্ডিত কৈলাস। কৈলাস পণ্ডিতের হাত ধরেই কালী এখানে প্রতিষ্ঠিত হন।

বছরের প্রতিদিনই মন্দিরে ভক্তদের ভিড় থাকে। তবে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে অমাবস্যায়। জনশ্রুতি রয়েছে, এই মন্দিরে সাধনার পর কৈলাস পণ্ডিতের সংস্পর্শে আসেন সাধক বামাক্ষ্যাপা। হংসগেড়িয়া কালীমন্দির থেকেই তিনি প্রেতাত্মা ও পিশাচ সাধনার শিক্ষা লাভ করেন। বেল, অশ্বত্থ ও নিম গাছের তলায় থাকা পণ্ডিত কৈলাসের পঞ্চমুণ্ডির আসনে সিদ্ধিলাভ করেন বামাক্ষ্যাপা। বামাক্ষ্যাপার পিশাচ সাধক গুরু কৈলাস পণ্ডিতের পঞ্চমুণ্ডি আসনে পুজোর পর হয় অমাবস্যায় হংসগেড়িয়ার দেবী চণ্ডীর আরাধনা হয়।

জনৈক সূর্যকুমার মণ্ডল বাংলার ১৩৬৬ সনে ৬ ফুট উচ্চতার মা কালীর মূর্তি নির্মাণ করেন। নয়াভাবে নির্মিত হয় মন্দিরও। আজও মন্দিরের মূর্তির পাশে বিরাজমান কৈলাস পন্ডিত পূজিত পাথরের ২ ফুট কালী। তন্ত্রমতে পুজো হয় এখানে। শাস্ত্রমতে পুজো হয় না হংসগেড়িয়ার কালীর, অমাবস্যায় প্রথমে পঞ্চমুণ্ডি আসনে পুজো হয়। তারপর শুরু হয় দেবীর আরাধনা। গঙ্গা মজে গেলেও আজও আদি গঙ্গা থেকেই পুজোর জল তোলা হয়। এছাড়াও নিত্য পুজো হয় এখানে। মন্দিরে বলি প্রথা নেই। মনোস্কামনা পূর্ণের আশায় আজও ভক্তরা সমবেত হন মন্দিরে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...