আজকের কালীকথায় উত্তর চব্বিশ পরগনার এক প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরের কথা। মন্দিরটি গোকণা গ্রামে অবস্থিত, গোকণা কালী মন্দির নামেই পরিচিত। বসিরহাট বাদুড়িয়ার, যদুরআঁটিতে রয়েছে গোকণা গ্রাম। কেউ কেউ বলেন মন্দিরের বয়স চারশো বছর, আবার কেউ কেউ বলেন মন্দিরের বয়স পাঁচশো-সাড়ে পাঁচশো বছর। মন্দিরের দেবী মা ভবানী নামে পরিচিত।
শোনো যায়, রাতের অন্ধকারে ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ডাকাতরা মা ভবানীর পুজো করত। ডাকাতি করে ফেরার পথে মায়ের পুজো দিয়ে তারা ফিরত। সেই মা ভবানীই আজ স্থানীয় গ্রামবাসীদের উদ্যোগে পূজিতা হচ্ছেন। কালীরপুজোর দিন মা কালীর আরাধনা হয়। খড়-গোলপাতার ছাউনির মন্দিরের বদলে ইট-বালি-সিমেন্টের মন্দির হয়েছে। প্রতিমারও পরিবর্তন হয়েছে। তবে মন্দিরের ঘট পরিবর্তন হয়নি।
মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে অজস্র ইতিহাস। জনশ্রুতি অনুযায়ী, ধান্যকুড়িয়ার জমিদার মহেন্দ্রনাথ গাইনের ছেলে মরণাপন্ন হলে, তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়ে মন্দিরে আসেন। মায়ের আশীর্বাদে পুনর্জীবন লাভ করে জমিদারের ছেলে। এরপরই জমিদার মহেন্দ্রনাথ গাইন পাকা মন্দির নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। মন্দিরের পুরোহিত কালীধন হালদারের জমির মাটি নিয়ে ইট পুড়িয়ে পুরোনো মন্দিরের পাশেই পাকা দালানের বড় মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। দেড়শো বছর আগে কৃষ্ণনগর থেকে চতুদোলায় চাঁপিয়ে জমিদার মহেন্দ্র গাইন প্রতিমা নিয়ে আসেন বসিরহাটে। ছোট প্রতিমাটি মন্দিরের পিছনের পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়। কিন্তু পুরনো ঘট নতুন মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজও তাতেই পুজোর ফুল পড়ে, যার বয়স প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ বছর। তবে হালদাররা এখানে প্রথম বসবাস শুরু করে। তারাই খড়ের গাদায় ছোট কালী মূর্তির পুজো করতেন।
মন্দিরের দেওয়ালে লেখা তথ্য অনুসারে, বাংলার ১৩১৯ সনের ১৬ বৈশাখ প্রস্তর কালীমূর্তির মা ভবানীর মন্দিরটি পাকাপাকিভাবে নির্মাণ হয়। ১৩৮৮ সালে মন্দির সংস্কার হয়। তার আগে প্রায় তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে খড়-গোলপাতার ছাউনির নিচে পূজিতা হতেন মা। মা ভবানীর সঙ্গে মন্দিরে পূজিত হয় তিনটি শিলাখণ্ড। শিলাখণ্ডগুলি হল বৈদ্যনাথ, মানেশ্বর ও পঞ্চানন। অর্থাৎ নারায়ণ ও শিব। শিলাখণ্ডগুলো সম্পর্কে শোনা যায়, একদা গ্রামের কোনও এক কৃষক চাষের জমিতে লাঙল দেওয়ার সময় লাঙলের ফলায় মাটি থেকে তিনটি শিলাখণ্ড পান। আজও হালদার পরিবার মন্দিরের পৌরহিত্যের দায়িত্ব সামলাচ্ছে। একদা মন্দিরে বলিদান চলত। এখন
মন্দিরে কুমড়ো বলির আয়োজন হয়। অনেকে মানসিক পূরণ হলে মায়ের ভোগ দেন। বসিরহাটের এই কালী মন্দিরে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন।