উনিশ শতকে প্রতিষ্ঠিত। বৌবাজার স্ট্রিট ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগ স্থলে ২৪৪, বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট ঠিকানার প্রাচীন এই মন্দির ঘিরে জড়িয়ে আছে বহু মিথ। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অ্যান্টনি কবিয়াল আর সৌদামিনীর প্রেমের কাহিনি। জনপ্রিয় দুই বাংলা ছবির দৌলতে লোকমুখে আরও প্রবল হয়েছে ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি আর ভিনদেশি অ্যান্টনি সাহেবের প্রেম আর ভক্তির মিথ। কিন্তু রাধারমণ মিত্র ‘কলকাতা দর্পণ’ বইয়ে লিখেছেন, অ্যান্টনি কবিয়ালের সঙ্গে ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির কোনও সম্পর্ক নেই। এটি অপপ্রচার।
মন্দিরের ফলকে প্রতিষ্ঠার সাল ৯০৫ বঙ্গাব্দ। তখনও খাতায়কলমে শহর কলকাতার জন্ম হয়নি। জলা জঙ্গলে ঘেরা জনপদ ভূমিতে পাতার ছাউনিতে ছিল শিব ও শীতলার মন্দির। সেখানেই পরে প্রতিষ্ঠিত হয় মাটির কালীমূর্তি। তবে এই প্রতিষ্ঠা কাল নিয়েও সংশয়ের অবকাশ আছে।
এক সময়ে এই অঞ্চলে বহু ইউরেশিয়ান থাকতেন। তাঁদের কেউ কেউ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তির জন্য এই মন্দিরে মানত করতে আসতেন বলে সম্ভবত মন্দিরটি লোকমুখে ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। কটনের লেখা কলকাতার ইতিহাস বইতে এই মন্দিরের কথা আলোচিত হয়েছে। তাঁর বিবরণের সূত্র ধরে বলা হয়ে থাকে, শ্রীমন্ত ডোম নামে এক তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকেই সম্ভবত মন্দিরের নাম হয়ে যায় ফিরিঙ্গি কালী বাড়ি।
পরবর্তীকালে সে মন্দির কোনও এক বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের হাতে আসে এবং তাঁরাই সেবাইত হয়ে মন্দিরের দেখাশোনা করে চলেছেন দীর্ঘকাল ধরে। সেবাইত পরিবারের দেওয়া তথ্য অনুসারে জানা যায়, ১৮৮০ সাল নাগাদ এই মন্দির হস্তান্তরিত হয়।
কালীর সিদ্ধেশ্বরী রূপের বিগ্রহ। জানা যায়, প্রতিষ্ঠাকাল সময়ের মূর্তিটা ছিল মাটির তৈরি। সিদ্ধেশ্বরী কালী ছাড়াও রয়েছে অষ্টধাতুর দুর্গা, জগদ্ধাত্রীর বিগ্রহ ও নারায়ণ শিলা । কালীপুজোর রাতে পঞ্চমুণ্ডীর আসনে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণমুখী এই সিদ্ধেশ্বরী কালীর পুজো দেখতে প্রচুর লোক আসেন।
দীপান্বিতা অমাবস্যায় এই মন্দিরে বিশেষ পুজোপাঠ চলে। লক্ষ্মীপুজঅর পর থেকে শুরু হয়ে যায় কালীপুজোর প্রস্তুতি। অঙ্গরাগ শুরু হয়ে যায় দেবীর। চলে সাত দিন ধরে। কালীপুজোর আগের দিন মাকে সাজিয়ে বেদিতে তোলা হয়। জমকালো শাড়িতে ও গয়নায় সুসজ্জিত করা হয়। এখনও পূজা হয় সম্পূর্ণ বৈদিক মতে। একদা পশুবলি হলেও থাকলেও এখন আর তা হয় না।