মা আসেন চালচিত্র জুড়ে, একান্নবর্তী পরিবার তো কবেই উঠে গেছে কিন্তু দুগ্গার চালচিত্র এখনও স্মরণ করায় বেঁধে বেঁধে থাকার কথা। নায়ক ছবিতে সত্যজিৎ, অরিন্দম অর্থাৎ উত্তমকুমারের মুখে একখানা সংলাপ দিয়েছিলেন। -'শঙ্করদা বলত ওই চালচিত্তির, ডাকের সাজ, ড্যাবড্যাবে চোখ না হলে ঠিক ভক্তি আসে না।' নীল রঙের চাল জুড়ে সেজে ওঠে চিত্র। মূর্তি হয়ে ওঠেন দেবী।
দিন দিন রুগ্ন হতে হতে এ শিল্প তলানিতে এসে ঠেকেছে। শিব রাত্তির সলতে হয়ে অদ্যাবধি গুটি কয়েকজন আগলাচ্ছেন এই শিল্পকে। খড়িমাটি ও চকখড়ি, নীল, হলুদ, ভুষোকালি, মেটে সিঁদুরে আঁকা হয় পট। সেজে ওঠে নানান কাহিনি, দশমহাবিদ্যা, নবর্দুগা, চণ্ডীর কাহিনি, দশাবতার, কৃষ্ণলীলা, মহাভারতের, রামায়ণের নানাবিধ ঘটনা।
চালচিত্র কত রকমের?
বাংলা চালি, চালাটি প্রায় গোল। একেবারে নীচে নেমে আসে চাল।
মার্কিনি চালি, চালটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি। এখন যে চালচিত্র আঁকা হয় বা দেখা যায়, প্রায় সবই মার্কিনি।
মঠচৌড়ি চালি, দেবীর মাথার উপরে তিনটি চুড়োর মতো চালি। মঠের মতো দেখতে হওয়ায় চালির নাম মঠচৌড়ি। রামদুলাল নিবাস অর্থাৎ ছাতুবাবু লাটুবাবুর পুজোয় এমন চালি দেখা যায়। দর্জিপাড়ার মিত্রবাড়ির চালিও মঠচৌড়ি।
টানাচৌড়ি চালিতে আবার আলাদা খোপ থাকে না। টানা কার্নিশের মতো চালচিত্রের মাথায় তিনটে চুড়ো থাকে। আবার কোথাও কোথাও তিনটে অর্ধবৃত্ত থাকে। আন্দুলের দত্তচৌধুরী বাড়িতে টানাচৌড়ি চাল দেখা যায়।
এছাড়াও হারিয়ে গিয়েছে সর্বসুন্দরী চালি, গির্জে চালি, দোথাকি চালি, খোপ চালি।
দিন যত এগোচ্ছে পুজোর অনুষ্ঠানিকতা বাড়ছে। থিম, খুঁটি পুজোর ভিড়ে হারাতে বসেছে পুজোর আদত আমেজ। তবু চালচিত্র দাঁড়িয়ে রয়েছে সাবেকিয়ানার সাক্ষ্য হয়ে।