কালী কথা: দোল পূর্ণিমায় পূজিতা হন চঞ্চলা কালী

উত্তরবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত দেবী হলেন মা চঞ্চলা কালী। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে রয়েছে দেবীর মন্দির। মহামায়া এবং চামুণ্ডার এক রূপ হলেন চঞ্চলা কালী। দোল পূর্ণিমার পর প্রতিপদে দেবীর পুজোর আয়োজন করা হয়। বালুরঘাট শহরের অদূরে ডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের হোসেনপুরের কাছে চকবাখর গ্রাম মেতে ওঠে চঞ্চলা কালীর পুজোকে কেন্দ্র করে। পুজো উপলক্ষ্যে মেলাও বসে। পুজো ও মেলা নিয়ে তিনদিনের উৎসব চলে। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের পাশাপাশি বিহার, ঝাড়খণ্ড সহ ভিনরাজ্যের ভক্তরাও হাজির হন পুজোয়। 

পুজো ঘিরে জনশ্রুতির অন্ত নেই, শোনা যায়; মন্দির এলাকা থেকে কিছু অলৌকিক নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। মানুষের দাবি, মাহিনগর এলাকার মহি রাজা পুজোর প্রচলন করেন। মাহিনগর থেকে সুরঙ্গ পথে চকবাখরে এসেছিলেন তিনি। তিনি মারা যাওয়ার পর পুজো দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে এলাকার বাসিন্দা স্বপ্নাদেশ পেয়ে আবার পুজো আরম্ভ করেন। আর্থিক সাহায্য করেন স্থানীয় জমিদার। 

পুজোর বয়স অনুমানিক তিনশো বছরের বেশি। মাঝে কয়েক বছর পুজোয় ছেদ পড়লেও, স্বপ্নাদেশ পেয়ে ফের পুজো আরম্ভ হয়। প্রথমে মন্দিরটি ছিল মাটির তৈরি, পরে পাকা মন্দির নির্মিত হয়েছে। 

a0d8f987-b2bd-4d5f-b7a4-3fa3f520b7fc

চঞ্চলা কালীর মন্দিরের পাশে শ্মশান কালী ও মাশান ঠাকুরের মন্দির রয়েছে। মা চঞ্চলার পুজোর পর দিন তাঁরাও পূজিত হন। তন্ত্র মতে পুজো হয়। চঞ্চলা কালী মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্দির, যেখানে পুজোর পরে দু'দিন রাতভর মঙ্গলচন্ডীর গান গাওয়া হয়। জনজাতি ও রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষজন দেবী চঞ্চলা কালীর পুজোর আয়োজন করেন। পুজো উপলক্ষ্যে তিনশো জন ভক্ত হন। প্রত্যেকেই পৈতা ধারণ করেন। এক জন সন্ন্যাসী সমস্ত নিয়ম, রীতি পালন করেন। একজন ব্রাহ্মণ পুরোহিত বার্ষিক পুজো করেন। প্রতি অমাবস্যায় ও পূর্ণিমায় চঞ্চলা কালীর পুজো করেন অন্য একজন পুরোহিত। নিত্য পুজো তিনিই করেন।

চঞ্চলা দেবীর উচ্চতা সাড়ে দশ হাত, তিনি অলঙ্কারে সজ্জিতা। এই কালীর পায়ের নিচে শিব নেই। আছে অসুর ও সিংহ। দেবীর আটটি হাত, লোল জিহ্বা। নরমুণ্ডের মালা পরেন দেবী। বাতাসা, কদমা ও নকুলদানা প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়। পুজোতে বলিদানের রেওয়াজ রয়েছে। পায়রা উৎসর্গ করা হয় দেবীর উদ্দেশ্যে। পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল ভক্তদের লোকক্রীড়া। অনেকটা গাজনের মতোই, কাঠের পাটাতনে পেরেক পুঁতে তার উপর ভক্তরা শিব-কালী সেজে নাচ করেন। বাজতে থাকে ঢাক, ঢোল, কাঁসর। মুখোশ পরে নাচ, অস্ত্র নিয়ে খেলা দেখানো ইত্যাদি চলে। প্রতিপদের গভীর রাতে চঞ্চলা কালীর পুজো হয়। 

মন্দিরের সামনেই রয়েছে একটি পুকুর। জনশ্রুতি রয়েছে, এই পুকুর থেকে একদা পুজোর কাজের জন্য থালা-বাসন ভেসে উঠত। এই পুকুরের জল দিয়েই মায়ের পুজোর যাবতীয় কাজ করা হয়। পুজোর পাঁচ দিন আগে মন্দিরে ঘট বসে। বলির হাড়িকাঠ সারা বছর পুকুরের জলেই ডোবানো থাকে। পুজোর দিন বিকেলে তা তোলা হয়। পাঁঠা, পায়রা, চুল বলির প্রথা রয়েছে। মা চঞ্চলার পুজো হয় তন্ত্রমতে। মন্দিরে ঘিরে রয়েছে অজস্র কাহিনি। ভক্তরা বিশ্বাসভরেই ফি বছর মায়ের পুজো করেন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...