কালী কথা: চকভবানী শ্মশান কালী বাড়ি

অবিভক্ত দিনাজপুরের অন্যতম বিখ্যাত কালী পুজো ছিল চকভবানী শ্মশানে কালী পুজো। ১৭২ বছর ধরে এখানে মায়ের পুজো হয়ে চলছে। মন্দিরটি আজ চকভবানী কালী বাড়ি নামেই পরিচিত। আজ মন্দিরে পূজিতা হন মৃন্ময়ী মা। তবে পুজো শুরু হয়েছিল শিলা খণ্ডে। এখন যেখানে এই মন্দির সেখানে ছিল আত্রেয়ী নদীর বালির চর। ছিল শ্মশান, শব সাধনা কালী আরাধনার জন্য আদৰ্শ স্থান। তখন আত্রেয়ী নদী ছিল যোগাযোগের মাধ্যম। বড় বড় জাহাজ, নৌকা যাতায়াত করত নদীপথে। অবিভক্ত দিনাজপুরে বাণিজ্য চলত আত্রেয়ী নদীর মাধ্যমেই। বাণিজ্যের কারণে বহু দূর দূরান্তের মানুষের আনাগোনা ছিল। আত্রেয়ী নদীর বালুচরে ব্যবসায়ীরা ও নৌকা চালকরা রান্নাবান্না করে বিশ্রাম করত। বালুচরেই শবদাহ করা হত। পরবর্তীকালে বালুচর শ্মশানের রূপ নেয়। অবিভক্ত বাংলার এই স্থানটি দিনাজপুরের চকভবানী নামেই পরিচিত। 

একদা আত্রেয়ী নদী দিয়ে একটা কষ্টিপাথরের শিলা খণ্ড ভেসে আসে। কৃষ্ণ বর্ণের সেই শিলা ভেসে আসার পর থেকে স্থানীয়েরা স্বপ্নাদেশ পেতে আরম্ভ করেন। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা স্বপ্নাদেশ পান দেবীর। স্বপ্নেই তাঁরা জানতে পারেন, আত্রেয়ী নদীর চর সংলগ্ন এলাকায় শিলা খন্ডটি আটকে রয়েছে। পরদিন ওই স্থানে গিয়ে তাঁরা শিলা খণ্ড দেখতে পান। শিলা খণ্ড আনতে গিয়ে দেখেন, ওই জায়গা আলোকিত হয়ে রয়েছে। জ্যোতি বের হচ্ছে সেই শিলা খণ্ড থেকে। শিলা খণ্ডটি নিয়ে এসে শ্মশান চত্বরে স্থাপন করে। স্থানীয়রাই শ্মশানের পাশে শিলাখণ্ডটি স্থাপন করে পুজো শুরু করে। বেশ কয়েক বছর অবহেলায় পড়ে থাকার পর শুরু হয় পুজো। ১৮৫২ সালে শুরু হয় পুজো। যা আজ শ্মশান কালী পুজো নামে খ্যাত হয়েছে। 

প্রথম অবস্থায় খড়ের ছাউনি দিয়ে মায়ের মন্দির তৈরি করে, শ্মশানে দেবীর পুজো শুরু হয়। বর্তমানে গড়ে উঠেছে পাকা মন্দির। মা এখানে চতুর্ভুজা, মৃন্ময়ী। তাঁর গাত্র বর্ণ নীল। রীতি অনুযায়ী আজও মৃৎশিল্পী কাঠামো পুজোর পর স্নান সেরে মায়ের মূর্তি তৈরিতে কাজ শুরু করেন। প্রতিবছর দীপান্বিতা অমাবস্যায় মহাসমারোহে দেবীর পুজো হয়। এখানে তন্ত্র মতে দেবীর পুজো হয়। জোড়া পাঠা বলি দেয়। মানত পূরণ হলে ভক্তরাও বলি দেন। এখানে বলিদান প্রথা আজও চলে। বোয়াল মাছ ভাজ দিয়ে দেবীর ভোগ নিবেদন করা হয়। তান্ত্রিক মতে, প্রতিমাসে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে মায়ের পুজো হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...