কলৌ কৃষ্ণত্বমাসাদ্য বৃন্দাবনবিহারিণী
বংশীনাদ-বিনোদেন মোহয়ত্যখিলং জগৎ।
অর্থাৎ দেবী কালীই কলিযুগের প্রারস্তে, বৃন্দাবনে কৃষ্ণরূপে নিজের বংশীধ্বনিত ত্রিভুবন মোহিত করেছিলেন। আজ কালী কথায় এক বৈষ্ণব কালীর কথা। দেবীর নাম বিমলা কালী। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মালঞ্চ গ্রামে অনন্যরূপে মা বিরাজ করছেন। এক পঞ্চবটীতে বিরাজ দেবী কৃষ্ণকালী। দেবী বিমলার মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হরিনাভি গ্রামের জমিদার দুর্গারাম কর। ১৭৯৮ সালে মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল। স্থানীয়রা দেবীকে বৈষ্ণবকালী বা কালীকৃষ্ণ বলেই জানেন। মন্দিরের বয়স দু'শো বছরের বেশি। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার মল্লিকপুর স্টেশনে নেমে এই মন্দিরে যাওয়া যায়।
এই মন্দিরে দেবীর রূপ হল বিমলা। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সতীপীঠে দেবী কালিকার রূপও বিমলা। দেবীর ভৈরব হলেন খোদ প্রভু জগন্নাথ। মালঞ্চের কৃষ্ণকালী মন্দিরের কাছেই রয়েছে জগন্নাথ মন্দির।
এক কালী মন্দিরে দেবীর গাত্রবর্ণ একেবারে কালো। তবে সাধারণ কালী মূর্তির মতো কৃষ্ণকালী মায়ের জিভ বের করা থাকে না। এখানে দেবীর রূপ শান্ত, সৌম্য। দেবীর পরনে থাকে লাল পাড় সাদা শাড়ি। দেবী সালঙ্করা, সোনার গয়নায় সজ্জিতা। মন্দিরের কাছেই রয়েছে অন্নপূর্ণা মন্দির। এছাড়াও রয়েছে শিব মন্দির। ১৭৫৯ সালে জমিদার কালীপ্রসাদ মৈত্র শিব মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
মূল রাস্তার দু'পাশে রয়েছে লাল রঙের ছোট অন্নপূর্ণা দেবীর মন্দির এবং সাদা রঙের পঞ্চশিব মন্দির। অন্নপূর্ণা দেবীর মন্দিরের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেই ডানদিকে পড়বে মন্দির। চারিদিকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা মায়ের মন্দির চত্বর। ছোট টিনের চালের নাটমন্দির রয়েছে মন্দিরের সামনে। মায়ের মন্দির লাল রঙের আটচালা মন্দির। মন্দিরের মাথায় তিনটি সোনার কলস ও ত্রিশূল গাঁথা রয়েছে।
গর্ভগৃহের মধ্যে কাঠের সিংহাসনে অধিষ্ঠান করছেন দেবী কৃষ্ণকালী। মায়ের গায়ের রং উজ্জল কালো। দেবী চতুর্ভুজা। চারটি হাতে নারায়ণের মতো শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম ধরে রয়েছেন দেবী। মায়ের মন্দিরের দুই দিকে রয়েছে শিবমন্দির ও রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব ও সারদা দেবীর মন্দির। মন্দিরগুলোর আকৃতি মাতৃ মন্দিরের মতোই। কেবল আকারে একটু ছোট। শিবমন্দিরের ভিতরে শ্বেতপাথরের বেদীতে কালো কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ রয়েছে। অন্য মন্দিরে শ্বেতপাথরের রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব ও সারদা দেবীর মূর্তি রয়েছে।
আদপে বিমলা হলেন কালীই, শক্তির রূপ। জগন্নাথ শ্রী বিষ্ণুর রূপ, বৈষ্ণব হিসেবেই তিনি পরিচিত। জগন্নাথ মন্দিরে রয়েছে দেবী মহামায়ার মন্দির। এই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বিমলা শ্রী মন্দিরের শক্তিস্বরূপা। প্রভু জগন্নাথ তাঁর ভৈরব হিসেবে অবস্থান করেন। তন্ত্রাশ্রয়ী বৈষ্ণব ধর্মের উত্থান ঘটেছিল বৈষ্ণব কালী আরাধনার মাধ্যমে।