খুড়িতে জল, কলাপাতায় এক কোনে একটু নুন-লেবু, আর কড়াইশুঁটির কচুড়ি, লম্বা লম্বা বেগুনভাজা, কুমড়োর ছক্কা, মাছের মাথা দিয়ে মুগের ডাল কিংবা চিংড়ি মাছের কাটলেট, শেষ পাতে রাবড়ি, দই, মতিচুর, এই বিশাল ভোজের কথা শুনে নিশ্চই ভাবছেন কিসের কথা বলছি? হ্যাঁ মশাই, বলছি পুরানো দিনের বিয়েবাড়ি আর তার ভোজের কথা| কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের বিয়ের ভোজে জায়গা করে নিয়েছে বিদেশী খাবার| আজ আর আমাদের বিয়েবাড়ির ভোজে উপরোক্ত খাবারের কোনো কিছুরই দেখা সেভাবে মেলেনা বললেই চলে| সেই সময়ের সেই সব খাইয়ে মানুষ গুলোও আজ বিলুপ্ত, যারা এক নিমেষে ৪০টা রসগোল্লা কিংবা ২০ পিস মাছ খেয়ে ফেলতে পারতো|
সেদিন হারিয়ে গেছে কলাপাতায় বা শালপাতায় বড় বড় লুচি বা রাধাবল্লভী, কুমড়োর ছক্কা, মাছের মাথা দিয়ে ডাল, মতিচুর, নানা প্রকার সন্দেশ ইত্যাদি কালের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে| বাঙালি বিয়ে বাড়ির অর্ধেক মজা কমে গেছে। ভাড়া বাড়ির সাথে সাথে এখন বিয়েতে আমাদের ভাড়া বাড়ি বা বাঙ্কোয়েট হলই পছন্দ| বিশ্বায়নের সাথে সাথে বাঙালি বিয়েতে এখন অনুপ্রবেশ ঘটেছে বিদেশী খাদ্য থেকে শুরু করে আদব কায়দারও| চিকেন বা মুরগি যা বেশ কয়েক বছর আগের বিয়ে বাড়ির তালিকায় ব্রাত্য থাকত তা আজ জমিয়ে খাওয়ার এক পদ বাঙালি বিয়েতে| সেকালে থাকত কাজু কিশমিশ মেশানো ঘি ভাত আজ তার জায়গায় দেখা যায় মাংস সহযোগে বিরিয়ানি বা নানা প্রকারের চালের পদ, চিংড়ির কাটলেট এর জায়গায় এসেছে ফিস ফ্রাই, ব্যাটার ফ্রাই বা চিকেন কাটলেট| বসে খাবারের ব্যবস্থার বদলে অতিথিদের তাক লাগানো বুফে সিস্টেম, টেবিল ভর্তি নানা স্যালাড আর মাটির বাসন বা কলাপাতার বদলে তার জায়গা নিয়েছে নানা ধরনের ক্রকারী| সেকালের বিয়েতে রান্নার জন্য একাই একশ ছিলেন বাড়ির গিন্নিরা ও সেরকম হলে ওড়িয়া হালুইকর আর খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে থাকত বাড়ির ও পাড়ার ছেলেরা| আজ সেই চিত্র উধাও। এখন সব চিন্তার অবসান হয় ক্যাটারিং বা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে দায়িত্ব দিয়ে | চিরাচরিত রাবড়ি, দই, মিষ্টির জায়গায় জায়গা করে নিয়েছে ক্যারামেল, নানা ডেসার্ট, আইসক্রিম ইত্যাদি| চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল, মোগলাই খানাই আজকের বাঙালি বিয়ের একমাত্র ভরসা আর এভাবেই পাল্টেছে বাঙালি বিয়ের চিত্র, অতীতের পাতায় আজ তা অতীত আর নয়তো স্মৃতিরোমন্থন| আর তাই এই বিয়ের মরশুমে পুরানো দিনের বিয়ে বাড়িকে একটু মনে করা যাক এভবেই|