কালী কথা: খাতড়া শ্মশান কালী

বাঁকুড়ার অন্যতম জাগ্রত মন্দির হিসাবে পরিচিত খাতড়া শ্মশান কালী মন্দির। আজ মন্দিরটি একেবারে সাজানো গোছানো, কিন্তু একদা পর্ণ কুটিরে শুরু হয়েছিল দেবীর আরাধনা। এখানে কালীর পুজো আরম্ভ হয়েছিল প্রায় শতাধিক বছর আগে। খাতড়া জঙ্গলমহলের জনপদ। ঘন শাল, পলাশ, মহুয়ার জঙ্গলের মাঝে ছিল বাউরী সম্প্রদায়ের মানুষদের শশ্মান। বাউরিরাই দেবীর মন্দির গড়ে পুজো শুরু করেন। ছোট্ট পর্ণ কুটিরে পূজিতা হতেন দেবী কালী। পর্ণ কুটিরের জায়গায় তৈরি হয়েছে মন্দির, উধাও হয়ে গিয়েছে জঙ্গল। খাতড়া শশ্মান কালীর পুজো আজ সার্বজনীন হয়ে উঠেছে। আজও চলে আসছে পুজো।

এক প্রান্তে থাকা যে শশ্মানে একদা শুধুমাত্র বাউরী সম্প্রদায়ের মানুষেরা মৃতদেহ সৎকার করতেন, এখনও সেই শ্মশান মৃতদেহ সৎকারের কাজে ব্যবহার করা হয়। কথিত আছে, বাউরীদের শশ্মানে এক উচ্চ পদস্থ পুলিশ আধিকারিক তাঁর মায়ের মৃতদেহ সৎকার করতে আসেন। তখনই প্রবল ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়-বৃষ্টিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে পাননি সেই পুলিশ আধিকারিক। পরবর্তীতে তাঁর উদ্যোগেই শ্মশানে স্থায়ী কালী মন্দির গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর উদ্যোগে কোড়ো পাহাড়ের চূড়ায় থাকা দেবী পার্বতীর মন্দিরের ধাঁচে কালী মন্দির তৈরি হয়। কালী মন্দির চত্বরে প্রায় পঁয়ত্রিশ বিঘা উমির উপর একে একে শিব মন্দির, রামকৃষ্ণ, সারদা ও বিবেকানন্দের মন্দির, রন্ধনশালা, প্রসাদ গ্রহণের জায়গা নির্মিত হয়।

কার্তিক অমাবস্যায় কালী পুজোর দিন খাতড়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার মানুষ হাজির হন শ্মশান কালী মন্দিরে। পুজোর পর দিন মন্দির চত্বরে নরনারায়ণ সেবা হয়, প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ প্রসাদ গ্রহণ করেন।স্থানীয়দের দাবি খাতড়া শ্মশান কালী অত্যন্ত জাগ্রত। ভক্তদের বিশ্বাস, মন ভরে দেবীর কাছে প্রার্থনা করলে দেবী কাউকেই খালি হাতে ফেরান না। বাঁকুড়ার খাতড়ায় শ্মশানকালীর টানে আজও ছুটে আসেন ভক্তেরা।

কালী পুজো অনন্য রূপে সেজে ওঠে মন্দির, আলোকসজ্জা শহরের বারোয়ারি পুজোগুলিকেও রীতিমতো টক্কর দেয়। কালীপুজোর দিনে এখানে প্রায় কয়েক হাজার মানুষের ভিড় হয়। শতাধিক বছর আগের জঙ্গলের মধ্যে পূজিতা শ্মশানের দেবী হয়ে উঠেছেন সকলের মা। স্থানীয় নিম্নবর্গের মানুষের হাতে পূজিতা হতেন মা কালী। আজ সকলেই আসেন মন্দিরে। দেবীর গাত্র বর্ণ কালো, তিনি চতুর্ভুজা। হাতে যেমন তাঁর খড়্গ থাকে, তেমনই তিনি আশীর্বাদ ও বরাভয়দায়িনী। এখন এখানে দশ মহাবিদ্যার মূর্তি স্থাপিত হয়েছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...