কালী কথা: বালুঘাটের মোটর কালী

মোটর কালী হলেন বালুরঘাট শহরের অন্যতম প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ কালী। মোটর কালীর পুজো, শহরের অন্যতম প্রাচীন পুজো। একদা ভূতের আতঙ্ক কাটাতে বালুরঘাট শহরের বর্তমান প্রাইভেট বাসস্ট্যান্ড চত্বরে কালীপুজো শুরু হয়েছিল। বাসস্ট্যান্ড ও সংলগ্ন এলাকা আজ জনবহুল হলেও, এক সময়ে ভয় আর আতঙ্ক গ্রাস করত গোটা এলাকাকে। আতঙ্ক থেকে মুক্তি পেতে কালীপুজো শুরু হয়। নিয়ম মেনে আজও পুজো হয়ে আসছে মোটর কালীর। মোটর কালীপুজোর বয়স একশোর বেশি বলেই শোনা যায়। কালী মায়ের পুজোর আয়োজন করেন বাসমালিক ও শ্রমিকরা। গাড়ির মালিকরা এই পুজো শুরু করায় মায়ের নাম মোটর কালী হয়ে গিয়েছে। নাম এমন অদ্ভুত হলেও চিরাচরিত কালী মায়েরই পুজো করা হয় এখানে। দেবী কৃষ্ণবর্ণা। তৈরি হয়েছে দেবীর স্থায়ী মন্দির।

 

বালুরঘাট শহরের এখনকার বড় বাজার সংলগ্ন এলাকার নাম ছিল ফটিকগঞ্জ। সেখানে সপ্তাহে একদিন ফটিকগঞ্জের হাট বসত। বালুরঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে জেলা হাসপাতাল ছিল। কিছুটা দূরেই ছিল হাসপাতালের মর্গ। লোকমুখে ওই মর্গ মরাকাটা ঘর বা লাশকাটা ঘর বলে প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে জেলা হাসপাতাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় রঘুনাথপুরে। মর্গও সরে যায় ওই এলাকা থেকে। পরিত্যক্ত মর্গ এবং মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি থেকে এলাকায় ভূতের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষজন ওই এলাকা এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। হাটের দিনগুলি ছাড়া ওই পথ দিয়ে যাতায়াত করতেন না আম জনতা। ভূতের ভয় মানুষ কাঁটা হয়ে থাকতেন। ভয় দূর করতে ওই এলাকায় কষ্টি পাথরের কালী মূর্তি স্থাপন করা হয়। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মূর্তিটি স্থাপন করা হয়, তাই দেবীর নাম হয় মোটর কালী। 

মোটর কালীর মূর্তিকে ঘিরে রয়েছে নানা কাহিনি। জনশ্রুতি রয়েছে, কষ্টি পাথরের কালী মূর্তিটি নাকি কুমারগঞ্জ ব্লকের বরাহার জমিদার বাড়ির। বহু বছর আগে জমিদার বাড়ি থেকে মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে সেই মূর্তি পাওয়া যায় মর্গের পাশে আত্রেয়ী নদীর খাঁড়িতে। সেখান থেকে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় মর্গের পাশে মূর্তি বসিয়ে পুজো শুরু হয়। মোটর কালী মন্দিরের পুজো শুরু জন্য ঘাটপুজো দিতে হয়। বলা হয়, মন্দিরে কালীর আরাধনার আগে ঘাটপুজো দেওয়া আবশ্যিক। মন্দির লাগোয়া আত্রেয়ী নদীর খাঁড়িতেই হয় ঘাটপুজো। কথিত আছে, ঘাটকালীর পুজো যেখানে হয় সেই জায়গায় সারা বছর জলমগ্ন থাকে। পরীক্ষামূলকভাবে সেচের ব্যবস্থা করেও সেই জল সরানো সম্ভব হয়নি। অথচ খরার সময় খাঁড়ির অন্য পাশে জল শুকিয়ে রীতিমতো চড়া পড়ে যায়। বালুরঘাটের বাসিন্দাদের ধারণা, কালীর আশীর্বাদেই এমন হয়।

পুজোয় এখনও বলিদান হয়। শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মন্দিরে সারা বছর মোটর কালীর নিত্য পুজো হয়। প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার মোটর কালী মায়ের অন্নভোগ হয়। চৈত্র সংক্রান্তিতে দেবীর বাৎসরিক পুজো হয়। চার প্রহর ধরে মায়ের পুজো হয়। কার্তিকের দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে দীপাবলীতে বড় করে পুজো হয়। দুই বড় পুজোর সময়েই মাকে নতুন শাড়ি পরান হয়। গোটা মন্দির সাজানো হয়। ফি বছর কার্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালী পুজোয় সম্পূর্ণ তান্ত্রিক বীরাচারী মতে পুজো হয়। কারণ, পাঠা বলি, বোয়াল মাছ ও শোল মাছ-সহ অন্নভোগ দিয়ে রাতে চার প্রহর ধরে মায়ের পুজো হয়। কালী পুজোয় হোম যজ্ঞ ও শিবা ভোগ দেওয়া হয়। গোটা জেলাজুড়ে এই পুজোর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। দেবী মোটর কালী ভক্তদের কাছে খুব জাগ্রত বলে পরিচিত।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...