কালী কথা: জগৎনগর কালী বাড়ি

জগৎনগর কালী বাড়ি, প্রায় ৩০০ বছরেরও অধিক সময় যাবৎ দেবী কালী এই মন্দিরে মা আনন্দময়ী রূপে বিরাজমান। হাওড়া বর্ধমান কর্ড লাইনে সিঙ্গুর ব্লকের অন্তর্গত মির্জাপুর বাঁকিপুর স্টেশনের কাছেই দেবীর মন্দির। স্টেশন থেকে মিনিট দশেকের হাঁটা পথ। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী আনন্দময়ীর নাম নিলে আর কোনও ক্ষতি হবে না।

জানা যায়, শ্মশানের উপরে গড়ে উঠেছে এই মন্দির। পঞ্চমুণ্ডের আসনের উপর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। মির্জাপুর বাকিঁপুর তথা আশপাশের এলাকায় কোনও বাড়িতে যেকোনও অনুষ্ঠান বা পুজো হলে আগে মন্দিরে এসে মায়ের কাছে পুজো দিয়ে যান মানুষজন। এমনকী কালীপুজো হলেও আগে এলাকার মানুষ জগৎনগর কালী বাড়িতে মা আনন্দময়ীর কাছে পুজো নিবেদন করেন। তারপর যে কোনও অনুষ্ঠান বা পুজোপাট শুরু করেন। কোনও মৃতদেহ সৎকার করার জন্য নিয়ে যাওয়ার আগে মায়ের মন্দিরের সামনে একটু দাঁড়িয়ে নাম সংকীর্তন করে, রওনা হন শবযাত্রীরা।

দেবীর নিত্যপুজো হয়। দীপান্বিতায় মহাধুমধাম করে পুজো হয়। সারাদিন বিশেষ পুজো-অর্চনা হয় মন্দিরে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। লক্ষাধিক ভক্তের ভিড়ে জগৎনগর কালী বাড়ি উপচে পড়ে। জনশ্রুতি রয়েছে, মায়ের মন্দিরে ধর্না দিলে, যেকোনও সমস্যায় মায়ের নির্দেশে প্রতিকার পাওয়া যায়। মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। মায়ের মহিমার কথা লোকের মুখে মুখে ঘোরে। কঠিন ব্যাধি থেকে পড়াশোনা বা কর্মক্ষেত্রে উন্নতি, নিসন্তান দম্পতির মুখে হাঁসি ফোটানো, মা আনন্দময়ীর কৃপায় সব হয়।

জনশ্রুতি রয়েছে, ৩০০ বছর আগে জগৎনগর গ্রামের জনৈক সুবল রায়ের কন্যা আঁন্দি কিশোরী বয়সেই মারা যান। তখন মির্জাপুর বাকিঁপুর ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা। কানা নদীর শাখা বয়ে গিয়েছে। শ্মশানে দাহ করা হয় আঁন্দিকে। সেই রাতে পাশের গ্রামের এক কালী সাধক স্বপ্নাদেশ পান। তিনি দেখেন আঁন্দি অধিষ্ঠিতা হয়েছেন, তাঁকে যেনও সে নিত্য পুজো করেন। সাধক জগৎনগর গ্ৰামে গিয়ে চিতার উপর ঘট স্থাপনা করে বাঁশের বেড়া দিয়ে গ্ৰামের মেয়ে আঁন্দিকে মাতৃরূপে পুজো করতে আরম্ভ করেন। অনেক পরে মাটির মন্দির তৈরি হয়। সিঙ্গুরের পলতাগড় নিবাসী ব্রাহ্মণ দীগম্বর চক্রবর্তী কাশীতে বসে মায়ের স্বপ্নাদেশ পান, তাঁর পুজোর দায়িত্ব নিতে নির্দেশ দেন দেবী। কাশী থেকে তড়িঘড়ি ফিরে দীগাম্বর চক্রবর্তী মা আনন্দময়ীর নিত্যপুজোর দায়িত্ব নেন। চক্রবর্তী পরিবারের পুরুষেরাই মায়ের নিত্য পুজো করে আসছেন রীতি মেনে। পরবর্তীকালে ১২৮৪ সালে কৈলাশচন্দ্র দত্ত মায়ের মন্দির তৈরি করেন। বেনারস থেকে কষ্ঠি পাথরের মূর্তি এনে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই মূর্তিই পুজিত হয়ে আসছে মায়ের মন্দিরে।

পরবর্তীকালে জরাজীর্ণ মন্দির সংস্কার করেন গ্ৰামবাসীরা। বাংলার ১৪১২ সনের ২৭শে মাঘ দক্ষিনেশ্বর মন্দিরের আদলে মায়ের নবনির্মিত মন্দিরে 'মা আনন্দময়ী'কে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। মূর্তি একই। ফি বছর মাঘ মাসে মায়ের বাৎসরিক পুজো পাঠ, হোম যজ্ঞ ও অন্নকূট উৎসব পালিত হয়। চারদিন ধরে উৎসব চলে।

জনশ্রুতি রয়েছে, প্রতি রাতে মা গভীর নিশিতে জাগ্ৰত হন এবং মন্দিরের পাশের পুকুরে স্নান করতে যান। গভীর রাতে মন্দির চত্বরে কেউ থাকতে পারে না। মন্দির ঘিরে এমন নানান কাহিনি রয়েছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...