সেই সন্ধিক্ষণে বাঙালিকে আর একবার গর্বিত করলেন। যেমন গর্বিত করেছেন নিজের মেধা দিয়ে তেমনি গর্বিত করলেন বাঙালি পোশাককে মর্যাদা দিয়ে। শুধু নিজেই নয়, বিদেশী স্ত্রী-ও যথার্থ সংগত করেছেন বাঙালি স্বামীকে। পুরস্কার যেমন পেয়েছেন স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে, পোশাকেও তেমনি ভারতীয় তথা বাঙালিয়ানা বজায় রেখে শাড়ি ও ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত হয়ে এসে অস্কার মঞ্চে পুরস্কার নিলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এস্থার ডুফলো।
মঙ্গলবার রাতে স্টকহোমের কনসার্ট হলে আনুষ্ঠানিকভাবে নোবেল কমিটি নোবেল পুরস্কার তুলে দিলেন এবারের বিজয়ীদের হাতে। সাদা-কালোর মাঝে তাঁরা হয়ে উঠেছিলেন একেবারে অনন্য। অভিজিৎ পরেছিলেন ধূসর পাঞ্জাবির ওপর গলা বন্ধ কালো কোট এবং সোনালী পাড়ের সাদা ধুতি। অপরজন সেজেছিলেন মেরুন ব্লাউজ ও সবুজ শাড়িতে। নব্বই মিনিটের অনুষ্ঠানে ইতিহাস সৃষ্টি হল সুইডেনের স্টকহোম কনসার্ট হলে। ভারতে ঘড়ির কাঁটা দশটা প্রায় ছুঁয়েছে, ঘোষণা করা হল অভিজিৎ, এস্থার এবং আর একজন নোবেল বিজয়ী মাইকেল ক্রেমারের নাম।
উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বিশ্বের দারিদ্র দূরীকরণে এই তিনজনের ‘রান্ডোমাইজ্ড কন্ট্রোল ট্রায়াল’ পদ্ধতির ভূয়সী প্রশংসা করা হচ্ছে, অভিজিৎ কিন্তু অবিচল। তিনি সে সময় মগ্ন নোবেল পুরস্কার সংক্রান্ত বইয়ে। প্রথমেই ডাক এল অভিজিতের। তিনি পুরস্কার নিতে এগিয়ে আসতেই হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ল কনসার্ট হল। সুইডেনের রাজা ষোড়শ কার্ল গুস্তাফের কাছ থেকে তিনি নোবেল পদক এবং শংসাপত্র গ্রহণ করলেন। তিনি প্রথমে রাজাকে সম্ভাষণ জানালেন, তারপর নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের মূর্তিকে এবং সব শেষে উপস্থিত অতিথিদের সম্ভাষণ করলেন অভিজিৎ। তারপর পুরস্কার নিলেন এস্থার এবং মাইকেল।
কমিটির তরফে তাঁদের কাজের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, গরিবি দূর করতে অভিজিৎ-এস্থারের গবেষণালব্ধ মডেলটি অভিনব। তাঁরা যে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে দারিদ্রের মূল কারণ খুঁজেছেন এবং সেগুলি নিয়ে বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার থেকে পরিত্রানের উপায় খুঁজেছেন, সেটাই মূলত আরও গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে তাঁদের গবেষণাকে। তাঁদের তরফে আরও বলা হয়, গত দুই দশকে বিশ্বের সবক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। তবুও স্কুলছুট, শিশুমৃত্যুর মত সমস্যা রয়ে গিয়েছে। বেশ কিছু সাধারণ অসুখের প্রতিকার সম্ভব হচ্ছেনা। আজও বহু কৃষক জৈব সার ব্যবহার করতে পারেননা। এইসব সমস্যার উত্তর খুঁজতেই অভিজিৎরা গবেষণা চালিয়েছে, যা আগামীদিনে পথ দেখাবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অভিজিতের মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এবং ভাই অনিরুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুদিনে এই পুরস্কার দেন সুইডেনের রাজা। সেই ১৯০১ সাল থেকেই এই প্রথা চলে আসছে। এদিন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পুরস্কার পেলেন জে-ল্যাব(আব্দুল লতিফ জামিল পভার্টি অ্যাকশন ল্যাব)-এর সহযোগী গবেষক মাইকেল ক্রেমার। পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক জেমস এডুইন পেবেলসকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। রসায়নে নোবেল দেওয়া হয় জন বি গুডএনাফ, জন বি হুইটগাম এবং আকিরা ইয়েশিনোকে। অস্ট্রীয় লেখক পিটার হান্টকে-কেও নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেলজয়ীরা হলেন উইলিয়াম জি কেলিন জুনিয়ার, পিটার জে রাটক্লিফ, গ্রেগ এল সিমেঞ্জা। প্রসঙ্গত গুড এনাফ-ই হলেন এবারের সব থেকে বয়স্ক নোবেল প্রাপক। ২০১৯ সালের নোবেলের সম্পূর্ণ পুরস্কার মূল্য ৯০ লক্ষ সুইডিশ ক্রোনার।
Watch Abhijit Banerjee, Esther Duflo and Michael Kremer receive their medals and diplomas at the #NobelPrize award ceremony today. Congratulations!
— The Nobel Prize (@NobelPrize) December 10, 2019
They were awarded the 2019 Prize in Economic Sciences “for their experimental approach to alleviating global poverty.” pic.twitter.com/c3ltP7EXcF