গোটা তিলোত্তমা জুড়ে ছড়িয়ে আছে ইতিহাস আর নস্টালজিয়ার সমাহার। তবে আজ শহরবাসীর যে ভরসার নম্বর ‘১০১’ তার জন্ম বৃত্তান্তই আজ বলবো। হ্যাঁ এই নম্বর দমকলের। কলকাতার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে সেও নিজেকে এই গগনচুম্বী বাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু এর এই নাম কেন? শুরু কবে হলো? আজ সবই জানাবো।
সময়টা ১৮২০ সাল- ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা। প্রথমবার কলকাতায় ফায়ার সার্ভিস শুরু হল দুজন ইউরোপিয়ান কনস্টেবল এবং ২৩৪ জন খালাসি ও ভিস্তিওয়ালা নিয়ে। কিন্তু বাঙালির কাছে তার পরিচিতি ঘটলো ‘দমকল’ নামেই— এই নামের ব্যাখ্যায় আসছি পরে। এই সময় কোনো গাড়ি ছিল না। এর ঠিক ৩০ বছর পর অর্থাৎ ১৮৭১ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের অধীনে মাত্র পাঁচটি ফায়ার ইঞ্জিন তৈরি করা হয়; যার তিনটি ছিল ঘোড়ায় টানা গাড়ি। আর বাকি দুটি মানুষই টেনে নিয়ে যেত। বাস্তবিকই, তখন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা খুবই কম হত। তাই, গাড়িও ছিল কম।
এবার আসি ‘দমকল’ নামের ব্যাখ্যায় — উত্তর কলকাতার হেদুয়ার মোড়ে দেখা যাবে লম্বাটে পুরনো জং ধরা জরাজীর্ণ একটা লোহার বাক্স। কিন্তু কি ছিল এতে? যা ছিল তার আসল জিনিসটি ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়। লাল রঙের লম্বা, লোহারবাক্স। এটাই হল ‘দমকল’।
তখন টেলিফোনের চল ছিল না। আর আগুন লাগলে খবরটা ফায়ার সার্ভিস অফিসে দিয়ে আসতে আসতেই সব ভষ্মীভূত হতো। কিন্তু এ সমস্যার সমাধানে উপায় বার করলেন ক্যাপ্টেন বার্নার্ড অ্যান্সন ওয়েস্ট ব্রুক। ১৯১০ সালে শহরের প্রতিটা মোড়ে বসিয়ে দিলেন লম্বা লম্বা লাল লোহার পিলার। যার সামনের দিক একটি কাঁচ দিয়ে ঢাকা, আর ভেতরে থাকত একটি হাতল। এই পুরো বিষয়টির সঙ্গে সংযোগ থাকত নিকটবর্তী অফিসের । আগুন লাগলে, কেউ ওই কাঁচ ভেঙে হাতল ঘুরিয়ে দম দিলে সঙ্গে সঙ্গে খবর পৌঁছে যেত অফিসে। সেখান থেকে কর্মীরা তাড়াতাড়ি জায়গা বুঝে চলে যেতেন। ফলে সমস্যার সমাধান হয়। এই যে ‘দম’ দিয়ে ডাকা, সেই থেকেই কলকাতার ফায়ার সার্ভিসের ডাক নাম হয়ে গেল ‘দমকল’। শুধু কলকাতাতেই ১৫০-এরও বেশি এই লোহার কল বসানো হয় ।
১৮৭১ সালেই পাঁচটি জায়গায় দমকলের অফিস তৈরি করা হয়। লালবাজার , টালা, পামার’সব্রিজ, ভবানীপুর, ওয়াটগঞ্জ। ১৮৯৩ সালে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বাধীন হয় দমকল বিভাগ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেশ কয়েকটা দমকল অফিস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কলকাতা ফায়ার ব্রিগেড এবং দার্জিলিং ব্রিগেড- এই দুটি অফিসই টিকে থাকে। পরে আবার নতুন করে তৈরি হয়। এবার বলি এই লাল রঙের কারণ। বিশ্বের সমস্ত ফায়ার সার্ভিসের দিকে তাকালে উজ্জ্বল লাল রং নজরে আসবে। বাংলাও তার ব্যতিক্রম নয়। এমারজেন্সি সার্ভিসের জন্য লাল রংই প্রতীক।
আজ দমকল আধুনিকতার সাথে পাল্লা দিয়ে আরও আধুনিক হয়ে চলেছে। যদিও বিশ্বের পরিষেবার থেকে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলা। তাও কিছু ত্রূটি সত্ত্বেও তাঁরাও সাধ্যমতো চেষ্টা করেন তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে – তাই ভুল ভ্রান্তি যাই থাক এখনো কিন্তু বিপদের বন্ধু হয়ে আসে এই ১০১ নম্বরে ডাক দেওয়া মানুষগুলো। তাই আজ ২০০ বছর পেরিয়ে সে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে চলেছে।