প্রখর গ্রীষ্মের অবসানে বর্ষা আসে। বৃষ্টির ধারায় মাটি ভেজে। ফলবতী হয়ে ওঠে প্রকৃতি। প্রকৃতি যেন পার্বতী আর গ্রীষ্ম সেই জটাভূষণ রুদ্রদেব।
প্রবল গ্রীষ্মের প্রান্তে তাঁদের মিলন হয়। বর্ষা আসে। শান্ত হয় রুদ্র তেজ। তাই জ্যৈষ্ঠে হরপার্বতীর মিলন দিনটিকে বলা হয় শীতল ষষ্ঠী। বা শীতল যাত্রা।
শিবপুরাণ অনুযায়ী, স্বর্গে একবার প্রবল পরাক্রমী হয়ে উঠেছিল তারকাসুর নামে অসুর। তার থেকে নিস্তার পেতে সব দেবতারা বিষ্ণুর দ্বারস্ত হয়। তিনি বলেন বরপ্রাপ্ত তারকাসুর একমাত্র শিবপুত্রের দ্বারাই নিহত হবে এমনটাই ছিল ভবিতব্য। এদিকে সতীকে হারিয়ে পাগলপারা শিব মহাধ্যানে মগ্ন। তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় সাধ্য কার! তখন বিষ্ণু সহ দেবতারা শক্তির কাছে গিয়ে আর্জি জানান পার্বতী জন্ম গ্রহণ করে শিব জাগরনের জন্য। হিমালয় কন্যা রূপে জন্ম নেন দেবী পার্বতী।
শিবকে জাগ্রত করার জন্য মদনদেব কামশরে বিদ্ধ করেন শিবকে। শিবের রোষে তিনি ভস্ম হয়ে যান। কিন্তু কামশর আপন কাজটি সম্পন্ন করে।
পার্বতীর রূপ দেখে মুগ্ধ হন শিব। কিন্তু বিবাহের আগে পার্বতীর পরীক্ষা নিতে চান তিনি। তাই দেবী পার্বতীকে বিবাহের জন্য অনেক যোগ্য সুপুরুষের নাম প্রস্তাব করেন। তাঁর কথা শুনে রেগে যান দেবী। তিনি বলেন তিনি জ্ঞান ও উৎকর্ষের জন্যই মহাজ্ঞানী মহেশ্বরে মুগ্ধ। তাঁকেই পেতে চান স্বামী হিসেবে। উত্তরে সন্তুষ্ট হন শিব। জ্যৈষ্ঠের শুক্লপক্ষে ষষ্ঠ দিনে বিবাহ সম্পন্ন হয় তাঁদের।
শিব-পার্বতীর বিবাহ উপলক্ষে শীতল যাত্রা উৎসবে মেতে ওঠে ওড়িশার সম্বলপুর। প্রায় ৪০০ বছর ধরে চলে আসছে এই উৎসব। সম্বলপুরের রাজা পুরী জেলা থেকে উৎকল ক্ষত্রিয় ব্রাহ্মণদের সম্বলপুরে বসতি স্থাপন করানোর পর শুরু হয় শীতলযাত্রা পালন। শিব পার্বতীর বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে গেলে বিশেষ শোভাযাত্রা বের হয় সম্বলপুরের রাস্তায়। ওড়িশার নানা প্রান্ত থেকে শিল্পীরা আসে সম্বলপুরে।
হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী জ্যৈষ্ঠ মাসে শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ দিনে অনুষ্ঠিত হয় শীতলযাত্রা। ইংরেজি মতে মে-জুন। এক সপ্তাহ ধরে চলে বিবাহ উৎসব। কৃষিপ্রধান অঞ্চলে পর্যাপ্ত বর্ষার আকাঙ্খায় ঘরে ঘরে পালিত হয় শীতল ষষ্ঠী। ওড়িশা ছাড়াও দেশের নানা প্রান্ত থেকে শিল্পী ও ভক্তরা আসে সম্বলপুরে। কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হয়। প্রচুর বিদেশী পর্যটকও আসে লোক সংস্কৃতির টানে।