এই কলকাতার ভিতর আর এক কলকাতার বাস। সেই কলকাতা ধুলোয় ঢাকা। কয়েকশো বছরের ইতিহাস তার ঝুলিতে। সময় বদলেছে। বদলেছে চারপাশ। তবু তার গল্পগুলো আজও জেগে আছে। এই শহরের রাস্তা-গলির গল্পেও পাওয়া যায় তেমন ইতিহাসের টান। সেরকমই কিছু রাস্তার গল্প থাকল এই প্রতিবেদনে।
এজরা স্ট্রীট- ব্র্যাবর্ণ রোড আর রবীন্দ্র সরনীর মাঝখানে বাম দিকে যে সরু রাস্তা ঢুকে গিয়েছে তার নাম এজরা স্ট্রীট। ডেভিড এজরা এবং এলিয়া এজরার নামে এই রাস্তার নাম এজরা স্ট্রীট। কলকাতায় ইহুদি ঐতিহ্যের সাক্ষর বহন করছে এজরা স্ট্রীট।কলকাতার সবচেয়ে প্রভাবশালী ইহুদি পরিবার সম্ভবত ফাদার-সন রিয়েল এস্টেটের ম্যাগাজিন ডেভিড জোসেফ এজরা এবং এলিয়া ডেভিড এজরা এসপ্ল্যানেড ম্যানসন, চৌরঙ্গী বিল্ডিং- এর মতো ঐতিহ্যশালী ভবনগুলি এই দুই পরিবারের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল। এখন এজরা স্ট্রিট কলকাতার অন্যতম বড় আলোক সজ্জার বাজার। প্রায় ১৫০ টির মতো দোকান আছে এখানে। আলো ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের ভিড়ে গমগম করে এজরা স্ট্রীট।
মির্জা গালিব স্ট্রীট- আগে নাম ছিল ফ্রি স্কুল স্ট্রীট। অতীতে এই রাস্তায় অবৈতনিক স্কুল ছিল। এই অঞ্চলে একটি বাগান বাড়ি ছিল। সেই বাড়িতেই ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ওল্ট ক্যালকাটা চ্যারিটির অর্থে স্কুল শুরু হয়। স্কুল প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে ফ্রি স্কুল সোসাইটি। প্রথমে শুধুমাত্র ছাত্রদেরই পড়ার সুযোগ থাকলেও, পরে ছাত্রীদের জন্যও খুলে যায় স্কুলের দরজা।
ইতিহাসের একটি সূত্র বলে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীর ফাঁসীতে সারাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠার ভয়ে ইংরেজ সরকার এই ফ্রি স্কুল স্ট্রীটের কাছেই গোপনে কোনও এক গাছের গোড়ায় ছিন্নমুণ্ড চাপা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।
ফ্রি স্কুলের নামেই পরে এই রাস্তার নাম হয় ফ্রি স্কুল স্ট্রীট। এখন সেই নাম বদলে এই রাস্তা মির্জা গালিব স্ট্রীট নামে পরিচিত।
লাভলক স্ট্রীট- লাভলক স্ট্রীট নামটা শুনলেই ভ্যালেনটাইন গন্ধ ভেসে আসে। াদতে কিন্তু এই রাস্তার নামকরনে কোনও প্রেমের গল্প লুকিয়ে নেই। আর্থার স্যামুয়েল লাভলক নামে এক ধনী ব্যবসায়ী থাকতেন এই অঞ্চলে। লাভলক অ্যান্ড লুইস কোম্পানির মালিক। ১৯০৩ সালে তাঁর মৃত্যুর পর রাস্তার নাম হয় লাভলক স্ট্রীট।
বউবাজার স্ট্রীট- ডালহৌসি স্কোয়ার থেকে অ্যাভিনিউ অফ ইস্ট ওয়ার্ড নামে একটি রাস্তা শিয়ালদহ পর্যন্ত চলে গিয়েছে। এই রাস্তার নাম পরে হয় ‘বউ বাজার স্ট্রীট’। একটি মত অনুসারে, মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ মতিলাল তার বাঙালি পুত্রবধূকে একটি বাজার লিখে দেন, সেই বাজারটিই 'বহুবাজার'। অপর একটি মত বলে, এই রাস্তায় বহু দোকান ছিল তাই নাম হয় বহু বাজার স্ট্রীট। পরে তা বদলে হয় বউ বাজার স্ট্রীট।পরবর্তী সময়ে বউবাজার স্ট্রিটের নাম হয় বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট।
পার্ক স্ট্রীট- তিলোত্তমা কলকাতার মাথার মুকুটের মতো পার্ক স্ট্রীট বাঙালির বড়দিন মানেই পার্ক স্ট্রীট। এশিয়াটিক সোসাইটি, ট্রিঙ্কাস, ম্যুলা রুজ, বাকি শহরের থেকে এই রাস্তার গন্ধটা একেবারে আলাদা। অথচ এক সময় এই রাস্তাকেই পুরনো কলাকাতা বলত ‘গোরস্থানের রাস্তা’।শহরের অন্যতম সেরা আকর্ষণ। স্যার ইলিজা ইম্পে (১৭৮৩-১৭৮৯)কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তাঁর হরিণ পোষার শখ ছিল। একটি বাগান তৈরি করেছিলেন হরিণ রাখার জন্য। সেটি লোকমুখে ‘ডিয়ার পার্ক’ হিসেবে পরিচিত হয়। সেই থেকেই রাস্তার নাম পার্ক স্ট্রীট। পার্ক স্ট্রীট তৈরি হয়েছিল ১৭৬২। এখন পার্ক স্ট্রিটের নাম পাল্টে হয়েছে মাদার টেরিজা সরণি।
ক্যামাক স্ট্রীট- লর্ড কর্নওয়ালিস এবং লর্ড ওয়েলেসলিরর সময়ে কলকাতায় উইলিয়ম ক্যামাক নামে এক অর্থবান ব্যবসায়ী ছিলেন। ভারতীয় পণ্য ব্রিটেনে রপ্তানি করতেন। তিনি এই অঞ্চলে বাস করতেন। সেই সূত্রেই রাস্তার নাম হয় ক্যামাক স্ট্রীট। বর্ত্মানে এই রাস্তার নাম অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরণি।