আজ বলবো বীরভূম জেলার এক ছোট্ট গ্রামের কথা যেখানে আজও মূর্ত হয় সপ্তদশ শতকের ইতিহাস। এই গ্রাম বক্রেশ্বর আর চন্দ্রভাগা – দুই নদীর সংগমস্থলে অবস্থিত- পার্বতীপুর গ্রাম। সপ্তদশ শতকের একেবারে শেষভাগে এই জমিদারির পত্তন করেছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, তাও ২পয়সার বিনিময়ে। পার্বতীপুরের কাছারি বাড়ি থেকে তিনি নিজের জমিদারি পরিচালনা করতেন।
ত্রৈলোকনাথ নিজে যে প্রাসাদ তৈরি করিয়েছিলেন, তার অবশিষ্টাংশ এখনও দেখতে পাওয়া যায়। ভগ্নপ্রায় হয়ে গাছপালায় ঢেকে গিয়েছে তাঁর বংশধরদের নির্মিত অট্টালিকা। গ্রামের আরেক প্রান্তে কাছারি বাড়ির কিয়দংশ সংস্কার করে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে। যদিও ত্রৈলোক্যনাথের ছোটোভাই চন্দ্রমোহনের ভগ্নপ্রায় প্রাসাদের দোতলায় ওঠার সিঁড়ি আজও ব্যবহারের উপযোগী। আর সেই ছাদে উঠলে এখনো স্পষ্ট ভাবে গোটা গ্রামটি প্রত্যক্ষ করা যায়। প্রাসাদের নীচে আছে দুর্ভেদ্য অন্ধকারাছন্ন এক গোপন সুড়ঙ্গ। যদিও তার নির্মাণের কারণ আজও অজানা।
যাই হোক,গ্রামে সর্বাগ্রে চোখে পড়ে পরপর পাঁচটি শিবমন্দির। ডানদিকের মন্দিরটি ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় এবং বামদিকেরটি তাঁর ছোটোভাই চন্দ্রমোহনের স্মৃতিতে তৈরি। পুরীর মন্দিরের তিনটি শিখরের আদলে নির্মিত মাঝখানের মন্দিরগুলি। সেগুলো ত্রৈলোক্যনাথের দুই পুত্র বিষ্ণু ও গিরিশ এবং একমাত্র কন্যা কল্যাণেশ্বরীর স্মৃতিতে নির্মিত, তবে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত।
পার্বতীপুরের আরও দুটি পুরোনো মন্দির ভ্রমণার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ কেন্দ্র। তার মধ্যে একটি হল সিংহ চিহ্নিত দুর্গা মন্দির, এখানেই ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের ভাগ্নের বংশধরেরা আজও সেখানে নিত্য পূজা করে থাকেন কালী মন্দিরটিও সুপ্রাচীন। তবে সবচেয়ে পুরোনো গোপাল মন্দির। প্রতিষ্ঠাতার নাম না জানা গেলেও কথিত আছে এই মন্দিরে কৃষ্ণের অষ্টধাতু মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ত্রৈলোক্যনাথের পিতা নীলমাধব ঋষি। পরবর্তীকালে সেই মূর্তি চুরি হয়ে যায়। তবে বলতে দ্বিধা নেই এই ছোট্ট গ্রামটিতে সপ্তদশ শতকের ইতিহাস আজও কথা বলে, যা না দেখলে অনুভব করা সম্ভব নয়। তাই ঘুরে আসতেই পারেন; সড়ক পথে কলকাতা থেকে গাড়ি করে পার্বতীপুর যেতে মোটামুটি সাড়ে চার ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। বোলপুর থেকে একদিনেও পার্বতীপুর ঘুরে আসা যায়। সিউড়ি-বোলপুর রোডের সেকমপুর বাসস্টপ থেকে মাত্র তিন কিলোমটার দূরে পার্বতীপুর গ্রামের দেখা মিলবে।