চকলেট খেতে ভালবাসে না এমন মানুষ বিরল। কিন্তু তার সাথে যদি ইতিহাস মিশে যায় তাহলে তার মূল্য ও স্বাদ ঠিক কি হতে পারে সেই কথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তাই বলে চকলেটের সাথে ইতিহাস? জানাব সেই কথাই।
সম্প্রতি এমনই এক ১২০ বছর বয়সী চকলেটের সন্ধান পাওয়া গেলো অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় গ্রন্থাগারে। রানি ভিক্টোরিয়ার ছবি সমন্বিত টিনের এক বাক্স খুলতেই আত্মপ্রকাশ করলো সুগন্ধিত এক চকলেট। বাক্সের উপর খোদাই করা তারিখ জানান দিচ্ছে যে বাক্সটির প্যাকিং হয়েছিল ১৯০০ সালে। এত বছর পরেও সামান্য ক্ষয় হওয়া সত্ত্বেও অক্ষত আছে সেই চকলেট। ইতিমধ্যেই প্যাকিংয়ের তারিখ থেকে ইতিহাসের গন্ধ পাওয়া গেছে। এবার সেই নিয়ে কথা হবে।
এই যে ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বললাম তার কারণ আছে বৈকি! সেটি হল ১৯০০ সালের এক ঘটনা। এই সময় ব্রিটেন দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বোয়ার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ইতিমধ্যেই নতুন বছরের শুভেচ্ছাবার্তা ও উপহার হিসাবে রানি ভিক্টোরিয়া এই চকলেট পাঠান যুদ্ধরত সেনাদের জন্য যা তৈরি করেছিল ‘ক্যাডবেরি’। যাতে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশে সেই চকলেটগুলি নষ্ট না হয় তাই রানি ভিক্টোরিয়া সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যয়ে প্রায় ৭০-৮০ হাজার চকলেটের টিন বিশেষভাবে প্যাকিংয়ের নির্দেশ দেন। ক্যাডবেরি সংস্থাও রানির অনুমতিক্রমেই খড়ের প্যাকেজিং-এর ভিতর টিনের বাক্স ভরে পাঠায়। তারও ভেতরে ছিল সিলভার ফয়েলের মোড়ক। আর এই সব অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায় এই লাইব্রেরিতে। এক্ষেত্রে মনে হতে পারেই সেগুলো যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে লাইব্রেরিতে গেল কী করে ?
এখানেই আছে চমক। এই চকলেটটি পাওয়া যায় লাইব্রেরির কনসারভেশন ল্যাবে। পরিষ্কার করতে গিয়ে লুকোনো এই বাক্সের হদিশ মেলে বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান কবি অ্যান্ড্রু ব্যাঞ্জো প্যাটারসনের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে। আসলে প্রথম জীবনে অ্যান্ড্রু প্যাটারসন বেশ কিছু প্রথম সারির সংবাদপত্রে কাজ করেছিলেন। সেই সূত্রেই ১৯০০ সাল নাগাদ সাংবাদিক হিসাবেই যুদ্ধ চলাকালীন দক্ষিণ আফ্রিকায় যান এবং সেখান থেকেই তার এই সংগ্রহ।
এদ্দিন পর এমন এক ঐতিহাসিক চকলেটের পুনরুদ্ধার নিঃসন্দেহে আগ্রহের উদ্রেক করেছে। আর তাই সেই আগ্রহের নিরসনে লাইব্রেরির কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে এই চকলেট দেখা যাবে লাইব্রেরি মিউজিয়ামে, অবশ্যই কবির ব্যক্তিগত সংগ্রহ হিসেবেই-যা নেহাৎ কম পাওনা নয়।