তিন বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ফিরে আসতে চলেছে ডুরান্ড কাপ। স্বভাবতই খুশির হাওয়া বইছে আপামর ক্রীড়া মহলে তথা ফুটবলপ্রেমীদের মনে।
এ পর্যন্ত রাজধানী দিল্লীতে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে। এই প্রথমবার কলকাতায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ১২৯তম ডুরান্ড কাপ। ২রা অগাস্ট টুর্নামেন্টের শুরু , ২৪শে অগাস্ট পরিসমাপ্তি।
পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এই ঐতিহাসিক টুর্নামেন্ট প্রসঙ্গে জানান, “এই প্রথমবার ডুরান্ড কাপ কলকাতায় আয়োজিত হচ্ছে। মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টটি আয়োজন করতে কলকাতা পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আমাদের ভীষণভাবে সাহায্য করছে। এই মূহুর্তে ডুরান্ড বিশ্বের তৃতীয় প্রাচীন টুর্নামেন্ট। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান মাঠ ছাড়াও যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, কল্যানী ও শিলিগুড়ি স্টেডিয়ামে ম্যাচগুলি অনুষ্ঠিত হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় টুর্নামেন্টটি আয়োজনে এগিয়ে এসেছেন। তিনি সবসময়ই চেয়েছেন বৃহৎ মানের প্রতিযোগিতাগুলি ভারতে অনুষ্ঠিত হোক। মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল দুটি দলই ১৬বার করে টুর্নামেন্টটি জিতেছে। আমি আশা করছি এবারেও কলকাতা থেকে কোনও একটি দল চ্যাম্পিয়ন হবে।“
ডুরান্ড কাপের প্রধান অতিথি জেনারেল আরপি কলিতা প্রথমবার কোলকাতায় টুর্নামেন্টটি আয়োজন করতে পেরে ব্যক্তিগত আনন্দের কথা জানাতে গিয়ে বলেছেন, “এ বছর ‘সিটি অফ জয়’ অথবা ‘খুশির শহর’ কলকাতায় টুর্নামেন্টটি আয়োজন করতে পেরে আমি খুশি। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ) এবং পশ্চিমবঙ্গের ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএ) সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় আমরা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রফেশনাল টিমগুলির সাথে খেলার সুযোগ তৈরী হওয়ায় ছোট টিমগুলি লাভবান হবে। অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবে তারা। আর সেই সূত্রে জাতীয় দলের জন্য সম্ভাবনাময় ফুটবলারও খুঁজে পাওয়া যাবে। আমি আশা করছি এ বছর ডুরান্ড কাপ দেশের তরুণদের অনুপ্রাণিত করবে।“
এ বছর ১৬টি দল অংশ নেবে টুর্নামেন্টটিতে। মোট চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে এই দলগুলিকে। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের মতো হেভিওয়েট টিমগুলি ছাড়াও আই লিগ ও আই এস এল থেকে বেশ কিছু দল যোগদান করবে।
গত তিন বছরের মধ্যে প্রথমবার মেজর জেনারেল বসন্তকুমার রেপস্ওয়াল’কে টুর্নামেন্টটি আয়োজন করার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। টুর্নামেন্টটিতে আই এস এল-এর টিমগুলিকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “ডুরান্ড কাপ এখানে বেশ জনপ্রিয়। অসংখ্য মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে এতে। পাঁচটি আই এস এল দল, সাতটি আই লিগ দল ও চারটি সেনাবাহিনী দলের সমন্বয়ে টুর্নামেন্টটিকে ভৌগলিক চরিত্র দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।“
এমন ঐতিহাসিক টুর্নামেন্ট কেন তিন বছর বন্ধ ছিল সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, “ফুটবল শুধু পা দিয়েই খেলা হয় না। অসংখ্য হৃদয় জড়িয়ে থাকে তাতে। শ্রেষ্ঠ দলগুলিকে একসাথে এক মঞ্চে নিয়ে আসার নেপথ্যে যথেষ্ট কারণ আছে। সঠিক শহরে টুর্নামেন্টটি আয়োজন করার প্রয়োজন ছিলো আমাদের, সে জন্যেই আমরা একে ফুটবলের ‘রাজধানী’ কলকাতায় স্থানান্তরিত করেছি। এখানে আমরা যে ধরণের দর্শক দেখেছি, খুব কম জায়গাতেই তা নজরে পড়ে। সুতরাং, এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্যমত তৈরী করতে আমাদের ২-৩ বছর লেগে গিয়েছে, যেটা এখন আমরা তৈরী করতে পেরেছি।“
অন্যদিকে, আই এস এল-এর দলগুলি তাঁদের সিনিয়র টিম পাঠাবে কিনা এ বিষয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। এ সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, “দেখুন, এই প্রথমবার আমরা আই এস এল এর দলগুলিকে নিয়ে আসতে চলেছি।এআইএফএফ সমেত প্রত্যেকের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। এখন ব্যাপারটা হল সেখানে ট্রান্সফার উইন্ডো এখনও খোলা রয়েছে এবং কিছু স্কোয়াড বিদেশে ট্রেনিংরত রয়েছে। দলগুলি থেকে ফরেন প্লেয়ার পাওয়ার বিষয়টিতে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। সম্ভবত আই এস এল এর দলগুলি তাদের রিজার্ভ স্কোয়াড পাঠাবে। আমরা চেয়েছিলাম যৌথ পরামর্শের সঙ্গে মিলিত ভাবে এ বছরের টুর্নামেন্টটি আয়োজিত হোক।“
২রা অগাস্ট যুবভারতীতে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রতিযোগিতাটির শুভ সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ফাইনালেও মাঠে উপস্থিত থাকবেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ’ও উপস্থিত থাকতে পারেন ফাইনালে।
সেমিফাইনাল ও ফাইনালের ম্যাচগুলি দর্শকরা সরাসরি দেখতে পারবেন ‘স্টার স্পোর্টস্’ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। যদিও ম্যাচগুলি ডিডি স্পোর্টস্-এ সম্প্রচারিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে, যেমনটা হয়ে এসেছে। বৃহস্পতিবার থেকে দর্শকেরা ‘বুক মাই শো’ (bookmyshow) তে ম্যাচগুলির টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। বিজয়ী দলকে পুরস্কৃত করতে ৪০ লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়েছে, যেখানে ফাইনালিস্টরা ২০ লক্ষ টাকা করে পাবে। ‘কন্ট্রিবিউশনের’ ফলস্বরূপ সেমিফাইনালিস্ট দলগুলিকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।