১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট কীভাবে বদলে দিয়েছিল জাপানের ছোট্ট শহর হিরোশিমাকে জান তে ক্লিক করুন ছবির লিঙ্কে
ঘড়ির কাঁটা সবে আটটা পার করেছে। দিন শুরু হয়েছে ছবির মতো সুন্দর শহরটায়। কেউ স্কুল, কেউ অফিস কেউ বা নিজের কাজে ব্যস্ত।
আচমকা আকাশে তীব্র আলোর ঝলকানি। হলুদ, খাকি, কমলা রঙের তীব্র আলো চোখ ধাঁধিয়ে দিল। মনে হল আশেপাশে কেউ নেই। তারপর প্রচন্ড জোর আওয়াজ!
কী হল সেসব বোঝার আগেই নিমেষে বদলে গেল চারপাশটা। দুমড়ে মুচড়ে ধ্বংসস্তূপ মুহূর্তে। বদলে গেল গোটা দিনটাই। পাকাপাকি জায়গা করে নিল ইতিহাসের পাতায়। মানব সভ্যতার ক্ষত হয়ে। তারিখটা ৬ আগস্ট। শহরের নাম হিরোশিমা।
সেদিন সকালে কীভাবে বদলে গিয়েছিল হিরোশিমা এই বয়ান সেই শহরেরই এক নাগরিকের।
সেদিন সকালে আনবিক বিস্ফোরণে ধবংস হয়ে গিয়েছিল জাপানের হিরোশিমা শহর। সময়ের ক্ষত বছরের পর বছর ধরে প্রজন্মে প্রজন্মে বয়ে চলেছিল হিরোশিমা শহরে। পৃথিবী দেখেছিল যুদ্ধ আর বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ এবং যুদ্ধের ভয়াবহতম পরিনতির সাক্ষী হয়েছিল গোটা বিশ্ব। সাল ১৯৪৫।
হিরোশিমায় যে বোমাটি ফেলা হয়েছিল, মার্কিনীরা তার নাম ছিল 'লিটল বয়’। তার শক্তি ছিল প্রায় ১২ হতে ১৫ হাজার টন টিএনটির বিস্ফোরণ ক্ষমতার সমান। জাপানের পাঁচ বর্গমাইল এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল ‘লিটল বয়’।হিরোশিমা শহরের ৬০ শতাংশ বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
হিরোশিমা শহরের সাড়ে তিন লাখ মানুষের মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ শুধুমাত্র পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণেই মারা যায়। পরমাণু বোমার তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয় বহু মানুষ। তাদের বেশিরভাগের মৃত্যু হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জাপানের মানুষ জিনে ধারণ করেছিল সেই বিষ।
এই বোমার শিকার হয়েও যারা বেঁচে গিয়েছিলেন, তাদের ‘হিবাকুশা’ বলে চিহ্নিত করা হত। ভয়ংকর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে বাকী জীবন মৃতবৎ বেঁচেছিলেন তাঁরা।
এমন দুর্বিষহ পরিণতি দেখেই শান্তির আর্তি প্রবল হয়ে ওঠে বিশ্বজুড়ে। শান্তিকামী মানুষরা এক জোট হন। আনবিক বিস্ফোরণের ভয়াবহ স্মৃতি ভুলতে পারেনি পৃথিবীর মানুষ। ভাঙা শহরকে বহু বছরের চেষ্টায় আর অগণিত মানুষের পরিশ্রমে আবার গড়ে তুলেছে জাপান। শুধু একটি গম্বুজ ছাড়া। ভয়াবহ সেই দিনের স্মৃতি হিসেবে এক শান্তি পার্কের মাঝখানে। ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বলে ঘোষণা করেছে গম্বুজটিকে।