তিনি ছিলেন বলেই বাঙালি আজও কম খরচে মৎস কিনছে, খাইছে সুখে!

মৎস ধরিবো খাইবো সুখে, কিন্তু মাছ ধরা হবে কোথায়? খাল, বিল, পুকুর, নদী সব শেষ। আকাশ ঝাড়ু ফ্ল্যাট উঠে গিয়েছে! খোকা গেল মাছ ধরতে ক্ষীর নদীর কুলে, রবীন্দ্রনাথ সংগ্রহ করেছিলেন এই ছড়া। আজকের শহুরে খোকারা আর তেমন মাছ ধরতে যাওয়ার সুযোগ পায় না।

কিন্তু আজও বাঙালির পাতে দিব্যি মাছ উঠছে, রুই-কাতলায় আহার সারছি আমরা, কিন্তু কার জন্য? কার? হীরালাল চৌধুরী। তিনি প্রনোদিত প্রজননের জনক। মাছকে ইনজেকশন দিয়ে প্রজননে উত্তেজিত করে প্রচুর পরিমানে ডিম উৎপাদন করাই হল প্রনোদিত প্রজনন। বর্ষাকালে দেখবেন, কিছু মানুষ মাছ বাজারে ঘুরছেন। বড় বড় মাছের মাথা থেকে কী যেন নিচ্ছেন আর চলে যাচ্ছেন। আদপে তিনি সংগ্রহ করছেন পিটুইটারি। ওটাই উত্তেজক রূপে কাজ করত। তারপর তা মাছের দেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করিয়ে, মাছের প্রজনন ঘটানো হয়।

যে হারে বাঙালি মাছ সাবার করে দেয়, মাছের চাহিদা মেটাতে কৃত্রিম উপায় না গেলে হত না। নৈহাটি-ব্যারাকপুর অঞ্চলে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন হীরালাল। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর নানান দেশের নানান দায়িত্বশীল পদ সামলেছেন তিনি। তিনিই প্রনোদিত প্রজননের জনক। তাঁর জন্যই ১০ই জুলাই ‘ন্যাশনাল ফিস ফার্মার্স ডে’ হিসেবে পালিত হয়। কারণ ১৯৫৭ সালের ১০ জুলাই হীরালাল কার্প জাতীয় মাছের প্রণোদিত প্রজনন ঘটাতে সফল হন যা প্রাণীবিজ্ঞানের এক যুগান্তরকারী মৌলিক আবিষ্কার। তার আগে পর্যন্ত বিশ্বের কোথাও এই প্রক্রিয়ায় মাছের প্রজনন ঘটানো সম্ভব হয়নি। এই আবিষ্কারের জন্য হয়ত তাঁর নোবেল পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু? ওই কিন্তুতেই আটকে থেকে গেল।
ইনজেকশন দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে মাছের উৎপদন বাড়ানো গিয়েছে বলেই ২০০-২৫০ টাকা কিলো দরে এখনও মাছ মিলছে। হীরালাল ছিলেন বলেই বাঙালি আজও কম খরচে মৎস কিনছে, খাইছে সুখে!

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...