হিন্দু দেব দেবীর সংখ্যা ক্রমশঃ যেন বেড়েই চলেছে। হ্যাঁ - তা প্রায় ৩৩ কোটি ছাড়িয়ে গেছে সে বহুদিন হলো। তাদের যত্ন আত্তির শেষ নেই, তাঁরা তো ঘরের মানুষ, নিত্য সঙ্গী। তাই তাঁদের কাছে আব্দারের ধরণানুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের নামকরন করা হয়। এই তালিকায় রয়েছেন ভক্তফ্রেন্ডলি শিব, কালী এই দুই প্রথম সারির দেবতাদ্বয়। কারণ হেনো কোনো জায়গা নেই যেখানে এদের মন্দির নেই। আবার কিছু আধুনিক ঠাকুরের আবির্ভাব ঘটে চলেছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি হাই ভোল্টেজ কিছু দেবতার সন্ধান পাওয়া গেছে - যাঁরা এফেক্টিভ তো বটেই সেই সাথে রীতিমতো আধুনিক। যেমন বিধাননগর স্টেশন ছেড়ে শিয়ালদার দিকে এগোলে কাঁকুড়গাছির কাছে লাইনের ধারে দেখা মিলবে ‘লাইনেশ্বর শিবের ’। ইনি শিবের মডার্ন ফর্ম। ট্রেন দুর্ঘটনার থেকে রক্ষা করার জন্যই এই শিবঠাকুরের উৎপত্তি। যিনি দস্তুর মতো পুজো পান এবং ভক্তকুল নেহাত মন্দ নয়। ঠিক এই তালিকা ভুক্ত হয়েছে হিন্দমোটরের ‘বেকারেশ্বর শিব’। পরিস্থিতির নাগপাশে জর্জরিত বেকার যুবকদের নির্মিত এই মন্দির। স্থানীয়দের বিশ্বাস এখানে পুজো দিলে কেউ নাকি আর বেকার থাকে না। মেধা, শ্রম, ভাগ্যে ইনি গতি আনতে সফলভাবে অবতীর্ণ হয়েছেন। এবার খোদ কলকাতায় আরো একজন এই তালিকাভুক্ত রয়েছেন - তাঁর কথাই বলবো আজ।
ইনি ‘বাবা হাইকোর্টেশ্বর’। তবে ইনি অভিজ্ঞতা ও বয়েসের দিক থেকে বেশ প্রবীণ। হাইকোর্ট চত্বরে যাঁদের নিত্য যাতায়াত, তাঁদের কাছে তিনি অতি পরিচিত। কিরণশঙ্কর রোডে অবস্থিত এই হাইকোর্টেশ্বর মহাদেবের মন্দির। প্রায় একশো বছর আগে উড়িষ্যার জগদীশ চন্দ্র গিরি হাইকোর্ট অঞ্চলের একটি গাছের তলায় এই শিবলিঙ্গ খুঁজে পান। সেই শুরু। তবে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় আরো পরে, ১৯৫৬ সালে। মামলা মোকদ্দমার রায় বেরনোর আগে জয়ের আশায় প্রায় সবাই একবার এই থানে মাথা ঠেকান। এনার আয় নেহাত কম নয়। মন্দিরের গাত্র ফলকে এক অদ্ভুত সম্প্রীতির দৃশ্য চোখে পড়ে। হাইকোর্টেশ্বর মহাদেবের নাম বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি তিনটি ভাষাতেই লেখা আছে। যা বিরল। চাইলে এই হাইভোলটেজ বাবার দর্শন করে আসতেই পারেন। তবে মজা করে বললেও দেবদেবীদের কাছে এমন আপন করে আবদার করার ক্ষমতা ও অধিকারের এমন নিদর্শন বঙ্গ ছাড়া অন্যত্র মেলা দুষ্কর।