আমাদের বাড়ি, আমাদের থাকার জায়গা, শান্তির জায়গা, ক্লান্তি মেটানোর জায়গা, আরাম করার জায়গা, নিজের মতো করে সাজানোর জায়গা সর্বোপরি নিজের ব্যক্তিত্বকে অন্যের কাছে তুলে ধরার জায়গা। আমি যেমন মানুষ, তা যেমন আমার নিজের চেহারায়, ব্যক্তিত্বে ফুটে ওঠে, তেমনি আমি কিভাবে আমার বাড়িকে সাজিয়ে, গুছিয়ে রাখছি, তার ওপরেও আমার ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন হয়।
কিন্তু এই বাড়ি যখন শুধুমাত্র সম্পত্তি তৈরির মাধ্যম হয়ে ওঠে, তখন সেই বাড়িই হয়ে ওঠে আমাদের ঘাড়ের বোঝা। তেমনই একটি বাড়ি নিয়ে আজ একটু কথা বলব। তো এই বাড়িটি কেবলমাত্র একটি বাড়ি নয়। প্রাসাদই বটে। বলতে পারেন রাজপ্রাসাদ। ব্রিটিশ স্থপতি ক্লড ব্যাটলি ১৯৩৩ সালে রাজপ্রাসাদটি তৈরী করেন মুম্বইয়ের নিকটবর্তী অঞ্চলে ব্রিচ ক্যান্ডি এলাকায়। ওয়াঙ্কানারের তৎকালীন রাজা মহারাণা রাজ শ্রী অমর সিং জি -র আমলে তৈরী হয়।
দেশভাগের সময় তিনি ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেন। পরবর্তীতে তাঁর পুত্র প্রতাপ সিং জি ঝালা রাজা হওয়ার পর বিলাস ব্যাসনে ডুবে থাকতেন। তার ফলে প্রচুর পরিমান দেনা ও করের বোঝা সামলাতে না পেরে বাধ্য হয়ে মার্কিন সরকারের কাছে ৯৯৯ বছরের জন্য প্রাসাদটিকে লিজ দেন ১৯৫৭ সালে। বিনিময়ে পান ১৮ লক্ষ টাকা। বহু বছর এই রাজপ্রাসাদটি মুম্বইবাসীর কাছে মার্কিন দূতাবাস হিসেবেই পরিচিত ছিল। প্রাসাদটির নাম পরিবর্তিত হয়ে হয়েছিল লিঙ্কন হাউস। ২০১১ সালে ঐতিহ্যবাহী এই রাজপ্রাসাদ থেকে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে বান্দ্রা-কুর্লা কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
এবারে প্রাসাদটি বিক্রির কথা ভাবা হয়। বিস্তর দর কষাকষির পর ২০১৫ সালে ৭৫০ কোটি টাকা দিয়ে এই প্রাসাদ কিনে নেন পুনের বিখ্যাত ব্যবসায়ী সাইরাস পুনাওয়ালা। তিনি সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান। সংস্থাটির মূলত ওষুধের, বলা ভালো ভ্যাকসিন তৈরির ব্যবসা। ২০১৮ সালে ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী ভারতের সবচেয়ে ধনীব্যক্তিদের মধ্যে এই সাইরাস ছিলেন সপ্তম স্থানে। খবর হল, সাইরাসের কেনা এই বাড়ি এই মুহূর্তে ভারতের সবচেয়ে বেশি দামে কেনা বাড়ির তকমা পেয়েছে। ২ একর জমির ওপর তৈরী ৫০ হাজার বর্গফুটের এই বিশালাকায় প্রাসাদটি এই অঞ্চলের মূল আকর্ষণ তা বলাই বাহুল্য। বহু বছর আগে বাড়িটি গ্রেড-৩ হেরিটেজের তকমা পেয়েছে।
এবারে যেটা হচ্ছে, তা হল, বাড়ি তো তিনি কিনেছেন, কিন্তু দখল পাননি অত সহজে। কারণ ২০১৫ সালে বাড়িটি কেনার পর পরই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফ থেকে জমিটি তাদের বলে দাবি করা হয়। সাইরাস আইনের দ্বারস্থ হন। সেখানে সরকারি দাবির সপক্ষে ডেপুটি কালেক্টর জানান, নথি অনুযায়ী জমিটি ভারত সরকারের। ১৯৩০ সালে জমিটি ওয়াঙ্কানারের রাজপরিবারকে দেওয়া হয়। এইভাবে ঝামেলা মেটে। তবে বর্তমানে বাড়িটি মেরামতির পর্যায়ে রয়েছে।
এখন সেখানে থাকেন বর্তমান ওয়াঙ্কানার পরিবারের বংশধর রণজিৎ বিলাস। বিগত কয়েক দশক ধরে জমির ক্রমবর্ধমান দাম দেখে এই পরিবার শুধু আফশোস করছে। তবে শান্তির কথা একটাই, ভারতের সম্পত্তি ভারতের কাছেই থাকলো। অন্য কেউ এটির দখল নিতে পারেনি।