অচেনাকে চিনে নিতে শুধু নয়, অচেনাকে নব রূপদান করতে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। খাদ্যের ক্ষেত্রেও সে মিলনসাধন করতে অনায়াস দক্ষ। বিদেশি রোস্টে সে যোগ করেছে দেশি এঁচড়, ডিম রান্নায় সর্ষে-পোস্ত আর চাটনিতে রাঙা আলু। বাঙালি হেঁশেলেই একমাত্র এমন আশ্চর্য কান্ডকারখানা সম্ভব। আজ সেইসব রান্নার কিছু হদিশ দেওয়া হল।
এঁচড়ের রোস্ট
রোস্ট মানেই চিকেন তা নয় কিন্তু। দেশি এঁচড় দিয়েও যে এই রান্নাটি হয় তা অনেকেরই অজানা।
কী কী লাগবে
এঁচড়-১ কেজি
আলু-৫০০গ্রাম
টক দই-২০০গ্রাম
হলুদ গুঁড়ো-১ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো-আন্দাজমতো
তেজপাতা-ফোড়নের জন্য
গোটা গরমমশলা-দারচিনি, লবঙ্গ ও ছোট এলাচ-সব ২ টো করে
আদা-২০ গ্রাম
গরমমশলাগুঁড়ো-১ চা চামচ
সর্ষের তেল-রাঁধবার জন্য
কাঁচালঙ্কা-৩-৪ টে
ঘি-২ বড় চামচ
চিনি-সামান্য
নুন-আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধতে হবে
এঁচড় খোসা ছাড়িয়ে বুকো ফেলে বড় বড় টুকরো করতে হবে। আলুর খোসা ছাড়িয়ে এঁচড়ের চেয়ে একটু ছোট করে কেটে নিতে হবে। এঁচড় সেদ্ধ করে জল ফেলে দিতে হবে।কড়াই গ্যাসে বসিয়ে তেল দিয়ে গরম করে আলু ভেজে নিতে হবে। আদা বেটে নিতে হবে। টকদই খুব ভালোভাবে ফেটিয়ে আদাবাটা, হলুদগুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো ও চিনি মিশিয়ে আলুর সঙ্গে মাখিয়ে রাখতে হবে।কড়াইতে তেলের সঙ্গে ঘি দিয়ে গরম করে গোটা গরমমশলা আর তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে এঁচড় হালকা ভেজে তুলে রাখতে হবে। এরপর দই মশলা মাখা আলু কড়াইতে দিয়ে কষাতে হবে। কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে, নুন আর চিনি দিয়ে নাড়াচাড়া করে মশলার বাটি ধুয়ে অল্প জল দিয়ে গ্যাস কমিয়ে ঢাকা দিয়ে আলুগুলো সেদ্ধ করতে হবে। আলু প্রায় সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা এঁচড়গুলো দিয়ে মিশিয়ে আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। বেশ ঘি গড়ানো হলে গরমমশলাগুঁড়ো ছড়িয়ে দিলেই তৈরি এঁচড়ের রোস্ট। লুচি, রুটি, পরোটা অথবা গরম ভাত-সবার সঙ্গেই দারুণ জমে যায় এঁচড়ের এই রোস্ট।
সর্ষে-পোস্তবাটা দিয়ে ডিমের ঝাল
আজকের বাঙালি মূলত স্বাস্থ্যের কারণে হাঁসের ডিম তেমন পছন্দ করেনা। পোল্ট্রির মুরগির ডিম দিয়েই তাই এই রান্নাটি এখন করা যাক। তবে এর আসল স্বাদ পেতে চাই হাঁসের ডিম।
কী কী লাগবে
ডিম-৬টা
হলুদ গুঁড়ো-১ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো-আন্দাজমতো
সর্ষে(কালো বা সাদা যেটা পছন্দের)—২৫ গ্রাম
পোস্ত-৪০ গ্রাম
আদা-২৫ গ্রাম
তেঁতুল-অল্প
কালোজিরে-ফোড়নের জন্য
কাঁচালঙ্কা-৩-৪টে
সর্ষের তেল- রাঁধবার জন্য
চিনি-সামান্য
নুন-স্বাদ অনুযায়ী
কীভাবে রাঁধতে হবে
একটা কাঁচালঙ্কা আর নুন দিয়ে সর্ষে বেটে নিতে হবে। পোস্ত আলাদা করে বেটে রাখতে হবে। ডিমগুলো সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। ডিমগুলোর গা ছুরি দিয়ে একটু চিরে নিতে হবে। কড়াই গ্যাসে বসিয়ে সর্ষের তেল দিয়ে গরম করে ডিমগুলো বেশ কড়া করে ভেজে নিতে হবে। তেল কমে এলে আর একটু তেল দিয়ে গরম করে কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, আদাবাটা আর চিনি দিয়ে বেশ কষিয়ে নিয়ে সর্ষেবাটা আর একটু তেঁতুল গোলা দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে ভাজা ডিমগুলো দিয়ে অল্প জল দিতে হবে। জল শুকোলে পোস্তবাটা আর কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে আর একটু জল দিয়ে নেড়ে বেশ তেল গড়ানো হলে অল্প তেল ছড়িয়ে নামিয়ে নিতে হবে। পরিবেশন করতে হবে গরম ভাতের সঙ্গে।
রাঙা আলু দিয়ে জলপাই-র চাটনি
বসন্তে এখন গ্রীষ্মের ছোঁয়া। শেষ পাতে তাই চাটনি জমবে ভালো।
কী কী লাগবে
জলপাই-৩০০গ্রাম
রাঙা আলু-২০০গ্রাম
হলুদ গুঁড়ো-১ চা চামচ
সর্ষে-ফোড়নের জন্য
পাঁচফোড়ন-১ চা চামচ
শুকনো লঙ্কা-২টো
সর্ষের তেল- অল্প
চিনি-২৫০ গ্রাম
নুন-স্বাদ অনুযায়ী
কীভাবে রাঁধতে হবে
জলপাই আর রাঙা আলু ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে আলাদা আলাদা করে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। মিনিট পনেরো পরে ভালোভাবে কচলে জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এবার প্রেশার কুকারে আলাদা করে জলপাই আর রাঙা আলু সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ হলে খোসা ছাড়িয়ে ভালোভাবে চটকে মেখে নিতে হবে। কড়াই গ্যাসে বসিয়ে গরম করে পাঁচফোড়ন এমন ভাবে শুকনো কড়াইতে ভেজে নিতে হবে যাতে পুড়ে না যায়। একটু ঠান্ডা হলে মিহি গুঁড়ো করতে হবে। কড়াই পরিষ্কার করে তেল দিয়ে গরম হলে শুকনো লঙ্কা আর সর্ষে ফোড়ন দিয়ে রাঙা আলু আর জলপাই সেদ্ধ মাখাটা দিয়ে নেড়েচেড়ে হলুদ গুঁড়ো, চিনি আর নুন দিয়ে অল্প জল দিয়ে ফোটাতে হবে। বেশ গাঢ় হলে ভাজা পাঁচফোড়নের গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে ঠান্ডা হলে পরিবেশন করতে হবে। ভাত অথবা রুটি, পরোটা এই চাটনি সব কিছুর সঙ্গেই জমে যায়।